কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ বিল নিয়ে বিরোধী দলগুলো এবং সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মধ্যে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। এই বিলটিকে গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর এবং কেন্দ্রীয়করণের এক চরম উদাহরণ বলে অভিহিত করা হচ্ছে।
বিরোধীদের আপত্তি:
বিরোধী দলগুলোর মতে, এই বিল ভারতীয় গণতন্ত্রের বহুত্ববাদী কাঠামোর পরিপন্থী। কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, ডিএমকে, এবং বামদলগুলোর দাবি, রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রের আলাদা নির্বাচন গণতন্ত্রের মূলভিত্তি রক্ষা করে। সব নির্বাচন একযোগে হলে রাজ্যের রাজনৈতিক ইস্যুগুলো উপেক্ষিত হবে এবং কেন্দ্রীয় ইস্যুগুলো দ্বারা প্রভাবিত হবে।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, "এই বিল কার্যকর হলে রাজ্যের স্বায়ত্তশাসনের উপর আঘাত হানা হবে। এটি শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারকে আরও শক্তিশালী করার একটি কৌশল।"
সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতামত:
সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ বাস্তবায়ন করা আইনি এবং প্রশাসনিকভাবে অত্যন্ত জটিল। সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ যেমন ৮৩(২), ১৭৪(১), এবং ৩৫৬ সংশোধন করতে হবে, যা রাজ্যগুলোর সম্মতি ছাড়া সম্ভব নয়। এছাড়া, কোনো সরকার নির্ধারিত মেয়াদের আগেই ভেঙে গেলে বা অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হলে কীভাবে এই সিস্টেম কাজ করবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
ছোট দলগুলোর উদ্বেগ:
আঞ্চলিক ও ছোট দলগুলো বলছে, একযোগে নির্বাচন হলে তাদের প্রচারাভিযান এবং নির্বাচন পরিচালনা কঠিন হবে। কেন্দ্রে বড় দলগুলোর আধিপত্যে তাদের ইস্যুগুলো চাপা পড়ে যাবে।
অর্থনৈতিক ব্যয়ের প্রশ্ন:
সরকার এই বিলকে ব্যয় সাশ্রয়ী হিসেবে তুলে ধরলেও সমালোচকরা বলছেন, এটি বাস্তবায়ন করতে বিপুল অর্থ খরচ হবে। একযোগে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ও ভিভিপ্যাট কেনা এবং তাদের সংরক্ষণের জন্য বিশাল পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
ভোটারদের বিভ্রান্তি:
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একযোগে ভোট হলে ভোটাররা বিভিন্ন স্তরের সরকারের জন্য আলাদা ইস্যু বিবেচনা করতে পারবে না। কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় ইস্যুগুলোর মধ্যে গুলিয়ে ফেলার সম্ভাবনা তৈরি হবে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ক্ষতি করবে।
বিরোধীদের দাবি:
বিরোধীরা বিলটি দ্রুত যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে এবং জানিয়েছে, এর জন্য আরও বিস্তৃত আলোচনা ও সময় প্রয়োজন। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেন, "এই বিল শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের ইচ্ছাপূরণের হাতিয়ার। জনমতের গুরুত্বকে উপেক্ষা করা হচ্ছে।"
জনমতের অভাব:
সমালোচকরা আরও অভিযোগ করছেন, জনগণের মতামত ছাড়াই এই বিল পেশ করা হচ্ছে। তারা দাবি করছেন, এত বড় পরিবর্তন আনার আগে সর্বদলীয় বৈঠক এবং দেশব্যাপী আলোচনার প্রয়োজন।
সরকার যদিও বলছে, এই বিল গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করবে, সমালোচকরা একে গণতান্ত্রিক বহুত্ববাদ ধ্বংসের চেষ্টা বলে মনে করছেন।