'ব্লাড মুন' বা রক্তচাঁদ: রহস্যময় এক মহাজাগতিক দৃশ্য
বিশ্ববাসী মাঝে মাঝে চন্দ্রগ্রহণের সময় একটি আশ্চর্যজনক দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন, যাকে বলা হয় 'ব্লাড মুন' বা রক্তচাঁদ। এই ঘটনাটি ঘটে যখন পৃথিবী, সূর্য এবং চাঁদ এক সরলরেখায় আসে এবং পৃথিবী সূর্যের আলো সম্পূর্ণরূপে চাঁদের ওপর পড়া থেকে আটকায়। তবে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে কিছু সূর্যালোক চাঁদে পৌঁছায় এবং সেটি লালচে আভায় আলোকিত হয়।
কেন চাঁদ লাল দেখায়?
১. রেলি বিকিরণ (Rayleigh Scattering):
সূর্যের আলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার সময় ছোটো তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো, যেমন নীল ও বেগুনি, বেশি ছড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো, যেমন লাল ও কমলা, তুলনামূলকভাবে কম ছড়িয়ে পড়ে এবং চাঁদের পৃষ্ঠে পৌঁছায়। এই প্রক্রিয়া চাঁদকে লাল দেখায়।
২. বায়ুমণ্ডলীয় পরিস্থিতি:
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ধুলো কণা, জলকণা এবং অন্যান্য উপাদানের পরিমাণ রক্তচাঁদের রঙের তীব্রতাকে প্রভাবিত করে। বেশি ধুলো বা মেঘাচ্ছন্ন পরিস্থিতি চাঁদকে গভীর লাল দেখায়, আর পরিষ্কার বায়ুমণ্ডল হালকা কমলা বা তামাটে আভা দেয়।
৩. আলো বিচ্ছুরণ (Refraction):
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল দিয়ে আসা আলো চাঁদের দিকে বাঁকা পথে চলে। এই প্রক্রিয়াটি চাঁদকে আরও উজ্জ্বল লাল আভা প্রদান করে, যা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় দেখা রঙের মতো।
রক্তচাঁদের বৈচিত্র্য
চাঁদ পুরোপুরি পৃথিবীর ছায়ায় ঢেকে গেলে এটি সম্পূর্ণ লাল, কমলা, বা তামাটে রঙে আলোকিত হয়। এই রঙের বৈচিত্র্য নির্ভর করে তখনকার বায়ুমণ্ডলীয় পরিস্থিতি ও সূর্যালোকের ছড়িয়ে পড়ার প্রভাবের ওপর।
রক্তচাঁদ একটি মহাজাগতিক সৌন্দর্যের প্রকাশ, যা মানুষের মধ্যে বিস্ময় সৃষ্টি করে এবং পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যের পরিচয় দেয়।