২০২৫ সালের পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের শিক্ষা ক্ষেত্রে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হল। উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী আদৃতা সরকার এই বছরের মাধ্যমিকে প্রথম স্থান অর্জন করে ইতিহাস তৈরি করেছে। সে ৭০০ নম্বরের মধ্যে ৬৯৬ নম্বর পেয়ে ৯৯.৪৩% নম্বর নিয়ে সবার শীর্ষে রয়েছে।
আদৃতার এই সাফল্য কেবল তার নিজের জন্য নয়, বরং পুরো রাজ্যের জন্যই এক গর্বের মুহূর্ত। একজন প্রত্যন্ত এলাকার ছাত্রী হয়েও, কঠিন পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে আদৃতা প্রমাণ করেছে যে সুযোগ এবং সদিচ্ছা থাকলে যে কোনো প্রতিকূলতাকে জয় করা সম্ভব।
শীর্ষ স্থানাধিকারীদের সাফল্যের কাহিনী
আদৃতার পর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে অনুভব বিশ্বাস (মালদহ জেলার রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দির) এবং সৌম্য পাল (বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর হাইস্কুল), যারা উভয়েই ৬৯৪ নম্বর পেয়ে ৯৯.১৪% অর্জন করেছে। তৃতীয় স্থানটি ভাগ করে নিয়েছে ঈশানী চক্রবর্তী (বাঁকুড়া জেলার তাতুলপুর সরোজবাসিনী বালিকা বিদ্যালয়) এবং সুপ্রতীক মান্না। তাদের মধ্যে একজন ৬৯৩ এবং অপরজন ৬৯২ নম্বর অর্জন করেছে।
এ বছর মোট ৬৬ জন ছাত্র-ছাত্রী মাধ্যমিক পরীক্ষার শীর্ষ দশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। এই সংখ্যাটি রাজ্যের শিক্ষার সামগ্রিক মান উন্নতির প্রতিফলন।
শ্রেষ্ঠ জেলা: পূর্ব মেদিনীপুর
জেলাভিত্তিক ফলাফলের ক্ষেত্রে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা এই বছর শীর্ষস্থান অধিকার করেছে। জেলার পাশের হার ৯৬.৪৬%, যা রাজ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ। জেলার ছাত্রছাত্রীদের এই সাফল্য শুধুমাত্র তাদের কঠোর পরিশ্রমের ফল নয়, বরং এখানকার শিক্ষকদের নিরলস প্রচেষ্টা এবং অভিভাবকদের সমর্থনেরও প্রতিফলন।
কালিম্পং জেলা ৯৬.০৯% পাশের হার নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এখানে মেয়েদের পাশের হার ছিল চোখে পড়ার মতো—৯৭.৪৩%। এছাড়া, কলকাতা এবং পশ্চিম মেদিনীপুর যথাক্রমে ৯২.৩০% এবং ৯০.৫২% পাশের হার নিয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান দখল করেছে।
মাধ্যমিক পরীক্ষার সামগ্রিক চিত্র
২০২৫ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে পাশের হার ছিল ৮৬.৫৬%, যা বিগত বছরের তুলনায় সামান্য উন্নতি করেছে।
যদিও বেশ কিছু জেলা, যেমন জলপাইগুড়ি এবং মুর্শিদাবাদ, নিচু পাশের হার রিপোর্ট করেছে। জলপাইগুড়িতে ছেলেদের পাশের হার ছিল ৭৬.৭৯% এবং মেয়েদের ৭৩.৬৭%, যা রাজ্যের গড় হার থেকে অনেক কম।
আদৃতার জীবন এবং প্রেরণা
আদৃতার সাফল্যের পেছনে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম, পরিবার ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আদৃতা পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কার্যক্রমেও অংশ নেয়। তার বাবা-মা তার পড়াশোনার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন।
আদৃতা জানায়, "আমার স্কুল এবং পরিবার সবসময় আমাকে সহযোগিতা করেছে। আমার শিক্ষকরা আমাকে প্রতিটি বিষয় ভালোভাবে বুঝিয়েছেন। তাদের পরামর্শ এবং অনুপ্রেরণার জন্য আমি আজ এই জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছি।"
তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে আদৃতা জানায়, "আমি ভবিষ্যতে একজন চিকিৎসক হতে চাই। মানুষের সেবা করার ইচ্ছাই আমার অনুপ্রেরণা।"
একটি দৃষ্টান্তমূলক বার্তা
আদৃতার এই সাফল্য শুধুমাত্র তার একার নয়। এটি রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকার ছাত্রছাত্রীদের জন্য এক নতুন আশা ও অনুপ্রেরণার উৎস। মাধ্যমিক পরীক্ষার এই ফলাফল আমাদের শেখায় যে, লক্ষ্য স্থির রেখে পরিশ্রম করলে কোনো বাধাই অজেয় নয়।
পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাক্ষেত্রে এমন এক উদাহরণ সৃষ্টি করার জন্য আদৃতা এবং তার মতো সব সাফল্য অর্জনকারীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। তাদের এই সাফল্য ভবিষ্যতে আরও অনেক তরুণ-তরুণীকে স্বপ্ন দেখার সাহস যোগাবে।