ডিআর কঙ্গোর সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ১০ বছরের কঠোর শ্রমদণ্ড, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
কিনশাসা, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো
২১ মে ২০২৫, আপডেট: ২১ মে ২০২৫
২১ মে ২০২৫, আপডেট: ২১ মে ২০২৫
ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোর (ডিআর কঙ্গো) সাবেক প্রধানমন্ত্রী অগাস্টিন মাতাতা পোনিওকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ১০ বছরের কঠোর শ্রমদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দেশটির সাংবিধানিক আদালত এই রায় ঘোষণা করে।
মাতাতা পোনিওর সঙ্গে এই মামলায় আরও দুইজন আসামি ছিলেন। তারা হলেন দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ডিওগ্রাটিয়াস মুতোম্বো মোয়ানা নিয়েম্বো এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যবসায়ী ও আফ্রিকম কমোডিটিসের সিইও ক্রিস্টো গ্রোবলার। তাদের প্রত্যেককে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এই মামলার অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে বুকাঙ্গালোঞ্জো এগ্রো-ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক প্রকল্প, যা সাবেক প্রেসিডেন্ট জোসেফ কাবিলার আমলে শুরু হয়েছিল। এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত ২৮৫ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ২০৫ মিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০২০ সালে দেশটির জেনারেল ইন্সপেক্টরেট অফ ফাইন্যান্সের একটি প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ পায়। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে শুরু হওয়া এই প্রকল্পটি শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে, যা দেশটির জন্য বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়েছে।
মাতাতা পোনিও বর্তমানে দেশটির সংসদ সদস্য এবং লিডারশিপ অ্যান্ড গভর্ন্যান্স ফর ডেভেলপমেন্ট (এলজিডি) নামে একটি দলের প্রধান। তিনি আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেনশিয়াল নির্বাচনে বিরোধী দলের প্রার্থী হিসেবে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। তবে তিনি এই মামলাকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন। তার অভিযোগ, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স শেসেকেদির নেতৃত্বাধীন শাসক জোট ‘সেক্রেড ইউনিয়ন অফ দ্য নেশন’-এ যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে তার বিরুদ্ধে এই মামলা সাজানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এটি তার রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে বাধাগ্রস্ত করার একটি কৌশল।
সাংবিধানিক আদালতের রায় নিয়ে বিতর্কও দেখা দিয়েছে। মাতাতা পোনিওর আইনজীবীরা দাবি করেছেন, সংসদ সদস্য হিসেবে তার সাংবিধানিক অনাক্রমণযোগ্যতা রয়েছে, যা না তুলে এই বিচার বৈধ নয়। জাতীয় পরিষদের প্রেসিডেন্ট ভাইটাল কামেরহে এই রায়কে সংবিধান লঙ্ঘন বলে সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, সংসদ সদস্যের অনাক্রমণযোগ্যতা না তুলে কোনো বিচার করা যায় না। তিনি এই বিষয়ে সাংবিধানিক আদালতের নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন।
অন্যদিকে, সাংবিধানিক আদালতের প্রেসিডেন্ট দিয়েদোনে কামুলেটা বাদিবাঙ্গা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, সংবিধানের ১৫১ নম্বর ধারা অনুযায়ী আইনসভা বিচার বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তিনি জানান, এই মামলা ইতোমধ্যে এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে আর প্রসিকিউশনের অনুমোদনের প্রয়োজন নেই।
মাতাতা পোনিও এর আগেও এই মামলাকে বিচার ব্যবস্থার অপব্যবহার বলে অভিহিত করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, ২০২১ সালে একই আদালত তৎকালীন প্রেসিডেন্ট দিয়েদোনে কালুবার অধীনে এই মামলায় নিজেদের অযোগ্য ঘোষণা করেছিল। তিনি দাবি করেন, কালুবাকে প্রেসিডেন্টের চাপের কাছে নতি না স্বীকার করায় তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
ডিআর কঙ্গোর মতো একটি দেশে, যেখানে কোলটানের মতো প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য থাকলেও দারিদ্র্য ও সংঘাত বিরাজমান, এই ঘটনা দেশটির দীর্ঘদিনের দুর্নীতি ও শাসন ব্যবস্থার সমস্যাকে আরও সামনে এনেছে।