১৯ মে ২০২৫, সোমবার: সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আজ আলোচনা শুরু হয়েছে। ভ্লাদিমির লেনিনের ১৯১০ সালের একটি ঐতিহাসিক ছবি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে তিনি শ্রমিক সমবায় নিয়ে তার মতামত তুলে ধরেছিলেন। এটি কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক কংগ্রেসে তার বক্তৃতার অংশ।
লেনিন বিশ্বাস করতেন যে শ্রমিক সমবায় শ্রমিক শ্রেণির জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের শোষণ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এটি শ্রমিকদের সংগঠিত করতে এবং অর্থনৈতিক জীবনে তাদের ভূমিকা প্রস্তুত করতে সহায়ক হতে পারে। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মধ্যে এর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। শ্রমিক সমবায় শ্রমিকদের মধ্যে এমন একটি ভুল ধারণা তৈরি করতে পারে যে এর মাধ্যমে সামাজিক সমস্যার সমাধান সম্ভব। কিন্তু এটি শ্রেণিসংগ্রামের মূল সমস্যার সমাধান করতে পারে না।
লেনিনের এই চিন্তাধারা তার ১৯২৩ সালে প্রকাশিত রচনার ৩৩তম খণ্ডে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সেখানে তিনি পুঁজিবাদের সমালোচনা করেছেন এবং সমাজতন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। তার মতে, শ্রমিক শ্রেণির রাজনৈতিক চেতনা ও সংগঠন ছাড়া মুক্তি সম্ভব নয় এবং শ্রমিক সমবায় শুধুমাত্র একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারে, শ্রেণিসংগ্রামের বিকল্প নয়।
লেনিনের শ্রমিক সমবায় নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক বিতর্কের অংশ। ১৯১০ সালে কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক কংগ্রেসে তিনি উল্লেখ করেন যে শ্রমিক সমবায় শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে এবং শোষণ কমাতে সহায়ক হতে পারে। শ্রমিক সমবায় শ্রমিকদের সংগঠিত করে তাদের অর্থনৈতিক জীবনে সক্রিয় ভূমিকা নিতে সক্ষম করে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে এটি শ্রেণিসংগ্রামের মূল সমস্যা সমাধানে সক্ষম নয়। সমবায় শ্রমিকদের মধ্যে একটি ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি করতে পারে যে কেবল এটির মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তন সম্ভব, যা শ্রেণিসংগ্রাম থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেয়।
লেনিনের শ্রমিক সমবায় নিয়ে মতামত কীভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছিল
লেনিনের শ্রমিক সমবায় নিয়ে মতামত সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল। তিনি শ্রমিক সমবায়কে শ্রমিকদের সংগঠিত করার এবং তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতা বৃদ্ধির একটি মাধ্যম হিসেবে দেখতেন, যা পুঁজিবাদী শোষণ কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে তিনি সতর্ক ছিলেন যে, শ্রমিক সমবায় পুঁজিবাদের মূল শ্রেণিসংগ্রামের সমস্যার সমাধান নয়, বরং একটি সীমিত ব্যবস্থা।
সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রাথমিক পর্যায়ে লেনিনের এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ ও অংশগ্রহণ বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, যা শ্রমিক শ্রেণীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। বলশেভিকরা শ্রমিকদের মধ্যে এই সংগঠন গড়ে তোলার মাধ্যমে তাদের শক্তি থেকে প্রধান শক্তিতে পরিণত করার লক্ষ্যে কাজ করেছিল ।
তবে বাস্তবে সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনীতিতে শ্রমিক সমবায়ের ভূমিকা সীমাবদ্ধ ছিল এবং কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা ও রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ বেশি প্রাধান্য পায়। লেনিনের ধারণা অনুযায়ী শ্রমিক সমবায় পুঁজিবাদের বিকল্প হতে পারে না, তাই সোভিয়েত অর্থনীতিতে শ্রমিক সমবায়ের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা সীমিত ছিল। এই কারণে কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করেন শ্রমিক সমবায়ের অধিক গুরুত্ব দিলে সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনৈতিক ব্যর্থতা কিছুটা কমানো যেত ।
সংক্ষেপে, লেনিনের শ্রমিক সমবায়ের ধারণা সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনীতিতে শ্রমিকদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর তাত্ত্বিক ভিত্তি দিয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে এটি কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সীমিত পরিসরে কার্যকর হয়েছিল এবং বৃহত্তর অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তনে তা পর্যাপ্ত ভূমিকা রাখতে পারেনি।
আধুনিক সময়ে অর্থনীতিবিদ রিচার্ড উলফের মতামতের আলোকে এই বিষয়টি নতুনভাবে আলোচিত হয়। তিনি মনে করেন, শ্রমিক সমবায় সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনৈতিক ব্যর্থতা কমাতে ভূমিকা রাখতে পারত। এটি লেনিনের সময়ের পরবর্তী প্রেক্ষাপটে শ্রমিক সমবায়ের গুরুত্বকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখায় ।
সারসংক্ষেপে, লেনিন শ্রমিক সমবায়কে শ্রমিকদের ক্ষমতায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হিসেবে দেখলেও, শ্রেণিসংগ্রাম ও পুঁজিবাদের মূল বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের জন্য এটি পর্যাপ্ত মনে করেননি। শ্রমিক সমবায়ের মাধ্যমে সাময়িক সুবিধা পাওয়া গেলেও, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের জন্য শ্রমিক শ্রেণির রাজনৈতিক ঐক্য ও নেতৃত্ব অপরিহার্য বলে তিনি বিশ্বাস করতেন ।