হেগ, ২০ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, সকাল ৯:৩৯ (আইএসটি): নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে গত ১৮ মে, রবিবার, ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়ে একটি ব্যাপক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নেদারল্যান্ডসের কমিউনিস্ট পার্টি (এনসিপিএন) জানিয়েছে, এই বিক্ষোভে এক লাখেরও বেশি মানুষ অংশ নিয়ে নেদারল্যান্ডস সরকারের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা সরকারের ইসরায়েলের গাজায় সংঘটিত কর্মকাণ্ডকে সমর্থন দেওয়ার নীতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে, যাকে তারা 'গণহত্যামূলক আগ্রাসন' হিসেবে অভিহিত করেছে।
এনসিপিএনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায় ৫৩,০০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ নারী ও শিশু। এই পরিস্থিতির প্রতিবাদে নেদারল্যান্ডসের শ্রমিক শ্রেণি, ছাত্রছাত্রী এবং অন্যান্য নাগরিকরা বিভিন্ন মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ এবং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে, এই জনপ্রতিবাদের জবাবে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সংলাপের উদ্যোগ না নিয়ে বরং দমনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশি হামলা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কঠোর হস্তক্ষেপ এবং সরকারের নীরবতার সমালোচনা করেছে এনসিপিএন।
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা হেগের রাস্তায় একটি 'লাল রেখা' টেনে পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে। তারা দাবি করেছে, ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পরিকল্পিত ও নিয়মতান্ত্রিক আক্রমণ বন্ধ করতে হবে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের অবৈধ দখলদারি শেষ করতে হবে এবং ইসরায়েলের বর্ণবাদী শাসনের অবসান ঘটাতে হবে। এছাড়া, ইসরায়েলি কারাগারে আটক সকল ফিলিস্তিনি ও রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি এবং জাতিসংঘের রেজোলিউশন অনুযায়ী ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের তাদের ভিটেমাটিতে ফিরে যাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার দাবিও উত্থাপিত হয়েছে।
এনসিপিএন আরও অভিযোগ করেছে যে, নেদারল্যান্ডসের সাধারণ রাজনৈতিক দলগুলো, যেমন গ্রিনলিঙ্কস-পিভিডিএ, ডি৬৬, ভোল্ট, এসপি প্রভৃতি, যারা বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল, তারা ফিলিস্তিনি আন্দোলনকে 'ইহুদি-বিরোধী' হিসেবে চিত্রিত করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে এবং বিক্ষোভের অধিকারকে খর্ব করেছে। তারা আরও বলেছে, সরকার যখন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আবাসনের জন্য বাজেটে ঘাটতির কথা বলছে, তখন তারা অস্ত্র, যুদ্ধ এবং ইসরায়েলের সমর্থনে বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা ব্যয় করছে, যা সাম্রাজ্যবাদী নীতিরই প্রতিফলন।
২০২৪ সালে নেদারল্যান্ডসের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভের ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে এই সমাবেশ আরও তাৎপর্যপূর্ণ। গত বছর আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের শিবির ভেঙে দেয় এবং ১৬৯ জনকে গ্রেফতার করে, যা আরও বৃহত্তর প্রতিবাদের জন্ম দেয়। এনসিপিএন এই বিক্ষোভকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে দেখছে এবং জনগণকে সংগঠিত হয়ে সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, ফিলিস্তিনি জনগণের মুক্তির লড়াই বিশ্বব্যাপী শ্রমিক শ্রেণির অধিকারের লড়াইয়েরই অংশ।
ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য স্বাধীনতার দাবিতে এনসিপিএনের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে!