শিলিগুড়ি, ২৫শে জুলাই, ২০২৫: সাম্প্রতিক এক অভিযানে শিলিগুড়ি পুলিশ চেন্নাইগামী একটি বিলাসবহুল বাস থেকে ৩৪ জন তরুণীকে উদ্ধার করেছে, যা এক ভয়াবহ মানব পাচার চক্রকে প্রকাশ্যে এনেছে। এই ঘটনাটি দেহ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত একটি বৃহত্তর নেটওয়ার্কের দিকে ইঙ্গিত করছে। KB (@KbSundarmyth) নামের একটি এক্স (X) হ্যান্ডেল থেকে এই খবরটি প্রথম প্রকাশিত হয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই ঘটনার ঠিক দুদিন আগে, ২২শে জুলাই, ২০২৫-এ নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকেও ৫৬ জন মহিলাকে উদ্ধার করা হয়েছিল, যা ‘দ্য হ্যান্স ইন্ডিয়া’ প্রতিবেদন করেছিল।
এই পরপর দুটি ঘটনা প্রমাণ করে যে পাচারকারীরা পশ্চিমবঙ্গের পরিবহন ব্যবস্থাকে মানব পাচারের করিডোর হিসেবে ব্যবহার করছে, যা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং একটি গভীর এবং পদ্ধতিগত সমস্যার অংশ। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (NCRB)-র ২০২২ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে নিখোঁজ মহিলা (৪০,৭২৫) এবং নাবালিকার (১০,৫৭১) সংখ্যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগণা জেলা দুটি পাচারের মূল কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যা এই সমস্যাকে আরও প্রকট করে তুলেছে।
এই সংকটকে আরও গভীর করেছে পোলারিস (Polaris)-এর ২০২০ সালের একটি গবেষণা, যেখানে বলা হয়েছে যে বাস স্টেশন এবং রেল টার্মিনালের মতো পরিবহন কেন্দ্রগুলি পাচারকারীদের জন্য শিকার ধরা এবং তাদের পাচারের প্রধান ট্রানজিট পয়েন্ট। এই গবেষণা পুলিশের সাম্প্রতিক অভিযানের যৌক্তিকতা প্রমাণ করে এবং এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলিতে নজরদারি বৃদ্ধি ও কর্মীদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
পশ্চিমবঙ্গ যখন মানব পাচারের উৎস এবং ট্রানজিট রাজ্য—এই দ্বৈত পরিচয়ের সঙ্গে লড়াই করছে, তখন এই বড় মাপের উদ্ধারকার্যগুলি একদিকে যেমন সমস্যার গভীরতা প্রকাশ করছে, তেমনই এর মোকাবিলায় দৃঢ় পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেছে। এই ঘটনাগুলিকে একটি বৃহত্তর পাচার চক্রের অংশ হিসেবে দেখে তদন্ত করার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, নাগরিক সমাজ এবং পরিবহন সংস্থাগুলির উপর চাপ বাড়ছে, যাতে এই চক্রগুলিকে ভেঙে দেওয়া যায় এবং অসহায় নারী ও মেয়েদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়।