ব্যাংকক/নমপেন, ২৫ জুলাই, ২০২৫: থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সীমান্ত বিরোধ এবার ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে প্রতিবেশী এই দুই দেশ। গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক ও সেনা সদস্য। আহত হয়েছেন আরও অসংখ্য মানুষ।
সংঘাতে উভয় পক্ষই ভারী কামান, রকেট এবং বিমান হামলা ব্যবহার করছে। কম্বোডিয়ার সামরিক বাহিনী থাইল্যান্ডের বেসামরিক এলাকা লক্ষ্য করে রকেট ও শেল নিক্ষেপ করার অভিযোগ ওঠার পর থাই বিমানবাহিনী এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে কম্বোডিয়ার সামরিক অবস্থানগুলোতে পাল্টা হামলা চালিয়েছে।
সংঘাতের মূল কারণ:
এই রক্তক্ষয়ী সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে 'পান্না ত্রিভুজ' নামে পরিচিত একটি বিতর্কিত সীমান্ত এলাকা। এই অঞ্চলে থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া এবং লাওসের সীমান্ত মিলিত হয়েছে। অঞ্চলটিতে বেশ কয়েকটি প্রাচীন মন্দিরের অবস্থান, যা উভয় দেশই নিজেদের বলে দাবি করে। এর মধ্যে "তা মোয়ান থম" মন্দিরটি বরাবরই উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার প্রধান কারণ।
উত্তেজনার সূত্রপাত:
সাম্প্রতিক উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটে গত মে মাসে, যখন একজন কম্বোডিয়ান সৈনিক সীমান্ত সংঘর্ষে নিহত হন। এই ঘটনার পর উভয় দেশই সীমান্তে তাদের সৈন্য সমাবেশ বৃদ্ধি করে। এরপর গত ২৩ জুলাই একটি ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে থাই সেনারা গুরুতর আহত হলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে মোড় নেয়। থাইল্যান্ড এই ঘটনার জন্য কম্বোডিয়াকে দায়ী করলেও কম্বোডিয়া দাবি করেছে যে, মাইনগুলো পূর্বের সংঘাতের অবশিষ্টাংশ।
পারস্পরিক দোষারোপ ও কূটনৈতিক অবনতি:
উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে সহিংসতা শুরুর অভিযোগ এনেছে। কম্বোডিয়া অভিযোগ করেছে, থাইল্যান্ড তাদের ভূখণ্ডে অনধিকার প্রবেশ করেছে, যার জবাব দিতেই তারা আত্মরক্ষার্থে হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে, থাইল্যান্ড দাবি করেছে কম্বোডিয়া তাদের বেসামরিক এলাকায় নির্বিচারে ভারী অস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এই সংঘাতের জেরে উভয় দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে চরম অবনতি ঘটেছে। থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে, যার জবাবে কম্বোডিয়াও থাইল্যান্ডের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক কমিয়ে এনেছে।
সামরিক সক্ষমতার পার্থক্য:
সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। থাই বাহিনীর কাছে উন্নত আর্টিলারি এবং আমেরিকান-নির্মিত অ্যাটাক হেলিকপ্টারসহ আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে। অন্যদিকে, কম্বোডিয়ার সামরিক বাহিনী তুলনামূলকভাবে ছোট এবং তাদের সরঞ্জাম পুরোনো। থাইল্যান্ড প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের সাথে "কোবরা গোল্ড" এর মতো বড় আকারের যৌথ সামরিক মহড়া পরিচালনা করে, যা তাদের সামরিক সক্ষমতার পার্থক্যকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।
এই বিপজ্জনক সামরিক সংঘাত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি সৃষ্টি করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পরিস্থিতির ওপর গভীরভাবে নজর রাখছে এবং দ্রুত শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছে।