" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory ১৪ই জুলাই: ফরাসি বিপ্লবের আলোকবর্তিকা - বাস্তিল দুর্গের পতন ও শ্রেণী-সংগ্রামের বামপন্থী বিশ্লেষণ Bastille Day: A Class Struggle Unveiled – The French Revolution's Defining Moment //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

১৪ই জুলাই: ফরাসি বিপ্লবের আলোকবর্তিকা - বাস্তিল দুর্গের পতন ও শ্রেণী-সংগ্রামের বামপন্থী বিশ্লেষণ Bastille Day: A Class Struggle Unveiled – The French Revolution's Defining Moment

  


১৪ই জুলাই, ২০২৫: আজ ১৪ই জুলাই। ক্যালেন্ডারের পাতায় একটি সাধারণ দিন হলেও, ইতিহাসের গভীর প্রেক্ষাপটে এই তারিখটি এক অসামান্য তাৎপর্য বহন করে। আজ থেকে ২৩৬ বছর আগে, ১৭৮৯ সালের এই দিনে প্যারিসের বাস্তিল দুর্গের পতন ঘটেছিল – একটি ঘটনা যা কেবল ফ্রান্সের নয়, বরং সমগ্র বিশ্ব জুড়ে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক চিন্তাভাবনায় এক বিপ্লব এনেছিল। ফরাসি বিপ্লবের এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটিকে আজও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে, বিশেষ করে প্রগতিশীল ও বামপন্থী চিন্তাবিদদের কাছে, শ্রেণী-সংগ্রামের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে স্মরণ করা হয়।

ইতিহাসের সাক্ষী: বাস্তিলের পতন কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

১৭৮৯ সালের ফরাসি সমাজ ছিল গভীর বৈষম্য ও অসাম্যে পরিপূর্ণ। ফ্রান্সের জনসমাজকে প্রধানত তিনটি স্টেটে বিভক্ত করা হয়েছিল: প্রথম স্টেট ছিল যাজক সম্প্রদায়, দ্বিতীয় স্টেট ছিল অভিজাত শ্রেণী, এবং তৃতীয় স্টেট ছিল সাধারণ জনগণ – যার মধ্যে কৃষক, শ্রমিক, কারিগর, ছোট ব্যবসায়ী এবং এমনকি উঠতি বুর্জোয়ারাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই প্রথম দুটি স্টেট ছিল সমস্ত প্রকার কর থেকে মুক্ত এবং সমাজের সমস্ত সুবিধা ভোগ করত, অন্যদিকে তৃতীয় স্টেটকে বহন করতে হতো রাষ্ট্রের সমস্ত আর্থিক বোঝা। খাদ্য সংকট, অর্থনৈতিক মন্দা, এবং রাজতন্ত্রের বিলাসিতা সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল.



জনগণের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ এবং বঞ্চনার এই প্রেক্ষাপটেই ফরাসি বিপ্লবের বীজ রোপিত হয়। ১৪ই জুলাই, ১৭৮৯ সালের সকাল থেকেই প্যারিসের রাজপথ উত্তপ্ত ছিল। রাজার বিরুদ্ধে, স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের অসন্তোষ তীব্র রূপ ধারণ করেছিল। হাজার হাজার বিপ্লবী জনতা, যাদের অধিকাংশই ছিলেন প্যারিসের শ্রমজীবী এবং দরিদ্র মানুষ, বাস্তিল দুর্গের দিকে অগ্রসর হন। বাস্তিল ছিল তৎকালীন ফরাসি রাজতন্ত্রের পরম ক্ষমতার প্রতীক, একটি কুখ্যাত কারাগার যেখানে রাজনৈতিক বন্দীদের নির্মমভাবে আটকে রাখা হতো এবং নির্যাতন করা হতো। এটি ছিল রাজতন্ত্রের অত্যাচারের এক বাস্তব উদাহরণ।



দীর্ঘ অবরোধ এবং রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর, অবশেষে বিদ্রোহী জনগণ দুর্গটি দখল করে নেয়। দুর্গের কমান্ড্যান্ট ও তাঁর সৈন্যদের উপর আক্রমণ চলে এবং দুর্গটি জনতার দখলে আসে। এই ঘটনাটি ছিল প্রতীকী অর্থে রাজতন্ত্রের নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অবসান এবং প্রাক-বিপ্লবী শাসকের (ancien régime) বিরুদ্ধে জনগণের বিদ্রোহের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। বাস্তিলের পতন ফরাসি জনগণের মধ্যে এক নতুন আশার সঞ্চার করেছিল – এই বার্তা দিয়ে যে, সম্মিলিত গণশক্তির কাছে কোনো স্বৈরাচারী শাসনই অজেয় নয়।

ঐতিহাসিকরা মনে করেন, বাস্তিলের পতন কেবল একটি কারাগারের পতন ছিল না, বরং এটি রাজতন্ত্রের স্বেচ্ছাচারী শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের সম্মিলিত ইচ্ছার এক অবিস্মরণীয় বিজয়। এই ঘটনা ফরাসি সমাজে এক গভীর পরিবর্তন এনেছিল এবং ইউরোপের ইতিহাসেও এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়েছিল। ফ্রান্সের ইতিহাসে সেদিন থেকেই এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল – জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এক দৃঢ় পদক্ষেপ।



বামপন্থী দৃষ্টিকোণ থেকে বাস্তিল: শ্রেণী-সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি

বামপন্থী চিন্তাবিদরা বাস্তিল দুর্গের পতনকে ফরাসি বিপ্লবের একটি অপরিহার্য ও ঐতিহাসিক শ্রেণী-সংগ্রামের মুহূর্ত হিসেবে বিশ্লেষণ করেন। তাদের মতে, এটি ছিল শতাব্দীকাল ধরে শোষিত, বঞ্চিত এবং নিপীড়িত "থার্ড স্টেট" বা সাধারণ জনগণের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের এক বিস্ফোরক বহিঃপ্রকাশ, যা কেবল রাজতন্ত্রের প্রতীকী পতনই ছিল না, বরং একটি গভীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক রূপান্তরের সূচনা করেছিল।



বামপন্থীরা এই ঘটনাকে নিম্নোক্ত প্রধান দিকগুলো থেকে বিশ্লেষণ করে:

  • শ্রেণী বৈষম্য ও শোষণ: বিপ্লবের মূল কারণ: বাস্তিলের পতন তৎকালীন ফরাসি সমাজের গভীর শ্রেণী বৈষম্যেরই প্রত্যক্ষ ফল ছিল। ফ্রান্সের মোট সম্পত্তির সিংহভাগ (প্রায় ৯৫ শতাংশ) ছিল মাত্র ৫ ভাগ মানুষ (অভিজাত ও যাজক শ্রেণী)-এর হাতে, যারা কোনো আয়কর দিত না এবং সমাজের সমস্ত রকম সুযোগ-সুবিধা ভোগ করত। অন্যদিকে, সমাজের বৃহত্তম অংশ, সাধারণ জনগণ (কৃষক, শ্রমিক, কারিগর, ছোট বুর্জোয়া) ছিল করের ভারে জর্জরিত, ভূমিহীন বা নামমাত্র জমির মালিক, এবং তাদের কোনো মৌলিক অধিকার ছিল না। বাস্তিল দুর্গ ছিল এই শোষণেরই একটি নিরেট প্রতীক, যেখানে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সামান্যতম প্রতিবাদ করলেই মানুষকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হতো। বামপন্থীরা এই ঘটনাকে শোষক শ্রেণীর বিরুদ্ধে শোষিত শ্রেণীর সুস্পষ্ট এবং অনিবার্য বিদ্রোহ হিসেবে দেখে। এটি প্রমাণ করে যে, যখন অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য চরম আকার ধারণ করে, তখন বিপ্লব অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে।



  • জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ: বিপ্লবের চালিকা শক্তি: এই বিপ্লবে সাধারণ মানুষের, বিশেষত প্যারিসের শ্রমজীবী জনগণ (যারা সঁ-কুলোৎ নামে পরিচিত ছিল), কারিগর, ছোট ব্যবসায়ী এবং কৃষকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণকে বামপন্থীরা অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। তাদের মতে, বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ কোনো নির্দিষ্ট নেতার নির্দেশে বা একটি ছোট গোষ্ঠীর পরিকল্পনায় ঘটেনি, বরং এটি ছিল সাধারণ মানুষের সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষা, হতাশা এবং প্রতিরোধের ফল। বাস্তিল দুর্গ আক্রমণের উদ্দেশ্য কেবল অস্ত্র সংগ্রহ ছিল না, বরং রাজতন্ত্রের ক্ষমতার উৎস এবং অত্যাচারের প্রতীককে সরাসরি আঘাত করা ছিল। এটি ছিল গণশক্তির এক ঐতিহাসিক প্রদর্শনী, যা বুঝিয়েছিল যে ঐক্যবদ্ধ জনগণ কতটা শক্তিশালী হতে পারে।

  • সামন্তবাদের অবসান: এক নতুন সামাজিক ব্যবস্থার জন্ম: বাস্তিলের পতন ফরাসি বিপ্লবকে আরও গতিশীল করে তোলে এবং ফ্রান্সে সামন্তবাদের অবসানের পথ সুগম করে। এই ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন অংশে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে, যা 'মহাভীতি' (Great Fear) নামে পরিচিত। কৃষকরা জমিদারদের দুর্গ আক্রমণ করে এবং সামন্ততান্ত্রিক বকেয়া সংক্রান্ত সমস্ত দলিলপত্র পুড়িয়ে দেয়, যা তাদের উপর চাপানো শোষণের প্রতীক ছিল। বামপন্থীরা এই ঘটনাকে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কৃষক শ্রেণীর সরাসরি সংগ্রাম হিসেবে দেখে, যা একটি নতুন, বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার ভিত্তি স্থাপন করেছিল।

  • গণতান্ত্রিক অধিকার ও সাম্য প্রতিষ্ঠা: বিশ্বব্যাপী প্রভাব: যদিও ফরাসি বিপ্লব পরবর্তীতে বিভিন্ন চড়াই-উতরাই পেরিয়েছিল, এবং এর আদর্শ বাস্তবায়নে অনেক জটিলতা দেখা দিয়েছিল, বাস্তিলের পতন 'স্বাধীনতা, সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব' (Liberté, égalité, fraternité)-এর স্লোগানকে বাস্তবে রূপায়িত করার প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। বামপন্থীরা এটিকে আধুনিক গণতান্ত্রিক ধারণার বিকাশ এবং মানুষের অধিকারের ধারণাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করে। এটি দেখিয়েছিল যে, সম্মিলিত জনশক্তি কীভাবে স্বৈরাচারী ও শোষণমূলক শাসনকে উৎখাত করতে পারে এবং একটি নতুন, অপেক্ষাকৃত ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। ফরাসি বিপ্লবের এই আদর্শ পরবর্তীতে বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মুক্তি আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক বিপ্লবকে অনুপ্রাণিত করেছিল।



 ১৪ই জুলাই, ২০২৫ সালে দুর্গাপুরে বসে যখন আমরা বাস্তিল দুর্গের পতনের ২৩৬তম বার্ষিকী স্মরণ করছি, তখন এর বামপন্থী বিশ্লেষণ আমাদের মনে করিয়ে দেয় শ্রেণী-সংগ্রামের অবিরাম গুরুত্ব। এটি কেবল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়, বরং শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের, বৈষম্যের বিরুদ্ধে সাম্যের এবং স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার এক চিরন্তন প্রতীক। বাস্তিলের পতন শিক্ষা দেয় যে, জনগণ যখন ঐক্যবদ্ধ হয়, তখন কোনো শক্তিই তাদের দাবিয়ে রাখতে পারে না। এই ঐতিহাসিক ঘটনা আজও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।


Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies