ভাঙ্গড়, : দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙ্গড়ে তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় নতুন করে তিনজনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। এই নিয়ে মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে একজন সক্রিয় তৃণমূল কর্মী বলে জানা গেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে ব্যাপক শোরগোল পড়ে গেছে। শাসকদল তৃণমূল ও বিরোধী আইএসএফ একে অপরের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলছে।
গ্রেপ্তার ও তদন্তের অগ্রগতি:
পুলিশ সূত্রে খবর, প্রথমে এই খুনের ঘটনায় মোফাজ্জল মোল্লা নামে এক তৃণমূল কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই আজারুদ্দিন মোল্লা, জাহান আলী খান ওরফে কাঙ্গাল এবং রাজু মোল্লা নামে আরও তিনজনের সন্ধান পায় তদন্তকারীরা। গতকাল রাতে ভাঙ্গড়ের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতদের মধ্যে আজারুদ্দিন মোল্লাও একজন সক্রিয় তৃণমূল কর্মী। জানা গেছে, গত বছরই তিনি আইএসএফ ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন।
তদন্তকারীরা মনে করছেন, মোফাজ্জলের সঙ্গে ধৃত বাকি তিনজনের ঘনিষ্ঠতা ছিল এবং এই খুনের ঘটনায় তাদেরও যোগসাজশ ছিল। ধৃতদের আজ আদালতে পেশ করে পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানানো হবে, যাতে আরও বিস্তারিত তথ্য সামনে আসে এবং এই খুনের পেছনে আর কারোর হাত আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা যায়।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া:
এই খুনের ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের বক্তব্য: স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব এই ঘটনাকে দুষ্কৃতীদের কাজ বলে দাবি করেছে এবং আইএসএফ-এর মদদপুষ্ট হয়ে এই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছে। তাদের দাবি, মোফাজ্জল তাদের দলের কোনো পদাধিকারী নন।
আইএসএফ-এর বক্তব্য: আইএসএফ অভিযোগ করেছে যে এই ঘটনা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল। তারা সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছে এবং বলেছে যে শাসকদলের কর্মী-সমর্থকদেরই রাজ্য পুলিশের উপর বিশ্বাস নেই। তাদের মতে, "তৃণমূলই তৃণমূলকে মারছে।"
বিজেপির বক্তব্য: বিজেপি এই খুনের ঘটনায় তৃণমূলের "নোংরা ও ভয়ঙ্কর রাজনীতি" দেখছে। তারা বলছে যে পুলিশ তৃণমূলের লোকেদেরই গ্রেপ্তার করছে এবং এই খুনের পেছনে একটি গভীর চক্রান্ত রয়েছে।
অন্যদিকে বীরভূমে তৃণমূল নেতা খুন:
এদিকে, বীরভূমে আরেক তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কোনো গ্রেপ্তার হয়নি। পুলিশ দুই মহিলা সহ তিনজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। পরিবারের অভিযোগ, ওই তৃণমূল নেতাকে পথ ছাড়ার জন্য চিরকুট পাঠিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে এটিকে দুষ্কৃতীদের কাজ বলে আখ্যা দিয়েছে।
তদন্তের গতিপ্রকৃতি:
পুলিশ দুটি খুনের ঘটনাই গুরুত্ব সহকারে দেখছে। ভাঙ্গড়ে গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও তথ্য বের করার চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে, বীরভূমের ঘটনায় আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে খুনের কারণ এবং এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত শত্রুতা আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এই ঘটনাগুলি রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। আগামী দিনে তদন্তে আর কী তথ্য উঠে আসে, তার উপরই সবার নজর থাকবে।