ইন্দোনেশিয়ার একটি ঐতিহ্যবাহী খেলা, পাচু জালুর, বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে একটি ১১ বছর বয়সী ছেলের অসাধারণ পারফরম্যান্সের মাধ্যমে। এটি সুমাত্রা প্রদেশের রিয়াউ-এর নদীতে অনুষ্ঠিত শত বছরের পুরোনো মিনংকাবাউ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। এই উৎসবের সময়, দলগুলো সুন্দরভাবে সাজানো নৌকা চালায় এবং নৌকার সামনের দিকে একজন তরুণ পারফর্মার দাঁড়িয়ে নাচে, যা মাঝিদের উৎসাহিত করে এবং দর্শকদের মধ্যে উদ্দীপনা তৈরি করে।
ভাইরাল তারকা: রায়ান আরকান দীখা
সম্প্রতি, মাত্র ১১ বছর বয়সী রায়ান আরকান দীখা দ্রুতগামী পাচুজালুর নৌকার সামনের অংশে দাঁড়িয়ে তার মনোমুগ্ধকর নাচের জন্য ইন্টারনেট সেনসেশন হয়ে উঠেছে। তার এই পারফরম্যান্স বিশ্বজুড়ে মানুষের মন জয় করেছে এবং এটি একটি বৈশ্বিক ইন্টারনেট মিম এবং সাংস্কৃতিক মুহূর্ত হয়ে উঠেছে। ঐতিহ্যবাহী কালো পোশাকে এবং সানগ্লাস পরা রায়ানের ভিডিও লক্ষ লক্ষ বার দেখা হয়েছে। এনএফএল এবং ফর্মুলা ১ তারকা সহ বিভিন্ন সেলিব্রিটি এবং ক্রীড়াবিদরা তার নাচের অনুকরণ করেছেন, যা "অরা ফার্মিং" নামে পরিচিত একটি ট্রেন্ড ছড়িয়ে দিয়েছে। "অরা ফার্মিং" মানে হলো অনায়াসে আকর্ষণ এবং ব্যক্তিত্ব তৈরি করা।
ইন্টারনেট খ্যাতি থেকে সাংস্কৃতিক ও পর্যটন রাষ্ট্রদূত
রায়ানের নতুন খ্যাতি তাকে বাস্তব জীবনেও স্বীকৃতি এনে দিয়েছে। রিয়াউ-এর গভর্নর তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদেশের পর্যটন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ করেছেন, যা একজন ১১ বছর বয়সী ছেলের জন্য একটি অসাধারণ অর্জন। রায়ানকে ইন্দোনেশিয়ার সংস্কৃতি এবং পর্যটন মন্ত্রীদের সাথে দেখা করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবং সে জাতীয় টেলিভিশনে পারফর্মও করেছে। একজন রাষ্ট্রদূত হিসেবে তার এই নিয়োগ শত বছরের পুরোনো স্থানীয় ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের এবং বৈশ্বিক দর্শকদের কাছে তুলে ধরার ক্ষেত্রে তার ভূমিকাকে স্বীকৃতি দেয়]।
পাচু জালুর সম্পর্কে
পাচু জালুর ইন্দোনেশিয়ান সরকার কর্তৃক একটি জাতীয় অদৃশ্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত। এই ইভেন্টটি প্রতি বছর সুমাত্রার কুয়ান্তান সিঙিঙ্গিতে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে লম্বা, ক্যানো-সদৃশ নৌকাগুলো নদীতে প্রতিযোগিতা করে। প্রতিটি নৌকার সামনে একজন তরুণ নৃত্যশিল্পী, যাকে তুকাং তারি (বা আনাকে জই) বলা হয়, তারা ছন্দময় নাচের মাধ্যমে দর্শকদের আনন্দ দেয়, যা একই সাথে চিয়ারলিডিং এবং সাংস্কৃতিক প্রদর্শন]।
ঐতিহ্যগতভাবে, এই পারফর্মার তার ভারসাম্য এবং দক্ষতার জন্য নির্বাচিত হন এবং দলের মনোবল বজায় রাখার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। রায়ান তার বাবা এবং চাচার দ্বারা অনুপ্রাণিত, যারা উভয়েই এই খেলার ক্রীড়াবিদ ছিলেন। ৯ বছর বয়স থেকে সে এই উৎসবে পারফর্ম করা শুরু করে]।
রায়ানের গল্পের প্রভাব
রায়ানের "অরা ফার্মিং" নাচ একটি বিশ্বব্যাপী ভাইরাল ট্রেন্ড শুরু করেছে, যেখানে টিকটক ব্যবহারকারী এবং ক্রীড়া তারকারা তার নাচের অনুকরণ করছে।
স্বীকৃতি হিসেবে, রায়ান প্রাদেশিক সরকার থেকে একটি বৃত্তি পেয়েছে, যা তার শিক্ষা এবং একজন সাংস্কৃতিক আইকন হিসেবে তার অবস্থানকে সমর্থন করবে।
এই ঘটনাটি পাচু জালুর-কে কেবল একটি খেলা হিসেবে নয়, বরং ইন্দোনেশিয়ার একটি অনন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে তুলে ধরেছে, যা এখন বিশ্বব্যাপী দর্শকদের কাছে পরিচিত[।
রায়ান আরকান দীখার গল্প একটি শক্তিশালী উদাহরণ যে কীভাবে ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি আধুনিক বিশ্বে নতুন জীবন এবং প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে পেতে পারে, যা একজন তরুণ ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরের আনন্দময় প্রকাশ এবং সত্যতার দ্বারা সৃষ্ট।