" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory সোভিয়েত ইউনিয়নের নারী মুক্তি: একটি বিশদ বিশ্লেষণ The Soviet Union's Women's Policy: The Paradox of Formal Equality and Social Reality //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

সোভিয়েত ইউনিয়নের নারী মুক্তি: একটি বিশদ বিশ্লেষণ The Soviet Union's Women's Policy: The Paradox of Formal Equality and Social Reality

 



অক্টোবর বিপ্লবের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে যে নীতি ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল, তা ছিল বিশ শতকের এক ঐতিহাসিক অধ্যায়। পুঁজিবাদের সমালোচনায় কার্ল মার্কস ও ফ্রেডরিক এঙ্গেলস নারী-পুরুষের বৈষম্যকে শ্রেণিবিভক্ত সমাজের অনিবার্য ফল হিসেবে দেখেছিলেন। এই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সোভিয়েত রাষ্ট্র নারীর পূর্ণ মুক্তির লক্ষ্যে আইনি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের এক ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে। এই নীতির মূল উদ্দেশ্য ছিল নারীদের ঘরবন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত করে তাদের উৎপাদন ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত করা। তবে এই নীতির বাস্তবায়ন এবং এর ফলাফল ছিল জটিল ও পরস্পরবিরোধী।


আইনি সমতা ও প্রগতিশীল নীতি


১৯১৮ সালের সোভিয়েত সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়। এই অধিকার শুধু রাজনৈতিক বা আইনি ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তা অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনেও প্রসারিত হয়েছিল। বিবাহ ও পারিবারিক জীবনে নারীদের মুক্তি ছিল বলশেভিকদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। ১৯২০ সালে সোভিয়েত রাশিয়া বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে গর্ভপাতকে বৈধতা দেয়। একই সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ প্রক্রিয়াও সহজ করা হয়, যাতে নারীরা পিতৃতান্ত্রিক পারিবারিক কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীনভাবে নিজেদের জীবন পরিচালনা করতে পারেন। এর পাশাপাশি, কর্মজীবী নারীদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়, যেমন: বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি, কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা এবং শিশু যত্নের জন্য সরকারি ব্যবস্থার প্রচলন।



কর্মক্ষেত্রে নারীর ব্যাপক অংশগ্রহণ


সোভিয়েত রাষ্ট্রের শিল্পায়ন কর্মসূচিতে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল অপরিহার্য। কর্মসংস্থানকে নারীর মুক্তির একটি প্রধান হাতিয়ার হিসেবে দেখা হতো। ১৯৩০-এর দশকের শেষ দিকে, সোভিয়েত শিল্প কারখানায় মোট শ্রমিকের ৪২% ছিল নারী, যা ছিল এক বিশাল উল্লম্ফন। পরবর্তীকালে, ১৯৭০-এর দশকের মধ্যে দেশের মোট কর্মশক্তির প্রায় ৫১% নারী ছিলেন। নারীরা শুধু গতানুগতিক কাজ নয়, বরং ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিসিন ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তির মতো পুরুষ-নিয়ন্ত্রিত ক্ষেত্রগুলোতেও বিপুল সংখ্যায় প্রবেশ করেন। এই কর্মসংস্থান নারীদের আর্থিক স্বাধীনতা এনে দেয় এবং রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের অপরিহার্য করে তোলে।


শিক্ষার মাধ্যমে ক্ষমতায়ন


নারীদের ক্ষমতায়নের আরেকটি প্রধান স্তম্ভ ছিল শিক্ষা। সোভিয়েত নীতি অনুযায়ী, নারীদের জন্য সার্বজনীন ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছিল। ১৯৪০ থেকে ১৯৫০-এর দশকে এই নীতি আরও শক্তিশালী হয়, যার ফলে নারী সাক্ষরতার হার দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং পুরুষদের সঙ্গে শিক্ষার ব্যবধান প্রায় শূন্য হয়ে যায়। vocational training এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও নারীদের উৎসাহিত করা হতো। এর ফলস্বরূপ, বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নে নারী চিকিৎসক, শিক্ষক ও বিজ্ঞানীর সংখ্যা ছিল অনেক বেশি, যা পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় অনেক এগিয়ে ছিল।


রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব: প্রতীকী বনাম বাস্তব


রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সোভিয়েত সরকার একটি কোটা পদ্ধতি চালু করে। এর ফলে, স্থানীয় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন আইনসভায় নারীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পায়। ১৯২০-এর দশকে লাখ লাখ নারী ভোটে অংশ নেন এবং হাজার হাজার নারী স্থানীয় পরিষদে নির্বাচিত হন। ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে কিছু আইনসভার প্রায় ৫০% সদস্য ছিলেন নারী। এই পরিসংখ্যান দেখতে চমকপ্রদ হলেও বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। সর্বোচ্চ ক্ষমতাশালী পদ, যেমন পলিটব্যুরো, সেখানে নারীদের উপস্থিতি ছিল প্রায় শূন্য। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারীদের রাজনৈতিক ভূমিকা ছিল প্রতীকী, যা কেবল সোভিয়েত আদর্শের সাফল্য প্রদর্শনের জন্য ব্যবহৃত হতো। তাদের হাতে প্রকৃত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ছিল সীমিত।


নীতিতে পরিবর্তন ও সীমাবদ্ধতা


সোভিয়েত নারীর ক্ষমতায়নের এই প্রগতিশীল চিত্রটি সম্পূর্ণ ছিল না। স্তালিনের শাসনকালে নীতির একটি বড় পরিবর্তন আসে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ১৯৩৬ সালে গর্ভপাতকে সীমিত করা হয় এবং বিবাহবিচ্ছেদ কঠিন করে তোলা হয়। এ সময় বড় পরিবারের মায়েদের পুরস্কৃত করার নীতিও চালু হয়। এই পরিবর্তনগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, রাষ্ট্রের প্রয়োজন অনুযায়ী নারীর ভূমিকাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করা হচ্ছিল।

সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা ছিল "দ্বৈত বোঝা" (double burden)। কর্মক্ষেত্রে পূর্ণকালীন কাজ করার পরেও নারীদের গৃহস্থালি ও পারিবারিক কাজের সিংহভাগ দায়িত্ব পালন করতে হতো। পিতৃতান্ত্রিক মনোভাব এবং সামাজিক প্রত্যাশা সম্পূর্ণরূপে দূর হয়নি। এর ফলে, কর্মজীবনে নারীরা যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করলেও, তাদের ব্যক্তিগত জীবন ছিল অতিরিক্ত পরিশ্রমে ভারাক্রান্ত।


সোভিয়েত ইউনিয়নের নারী নীতি ছিল একাধারে সফল এবং ত্রুটিপূর্ণ। আইনি সমতা, ব্যাপক শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এটি ছিল এক বিপ্লবী মডেল। এর সাফল্য অনেক পশ্চিমা দেশকে অনুপ্রাণিত করেছিল। কিন্তু এটি সমাজে বিদ্যমান লিঙ্গবৈষম্য ও পিতৃতান্ত্রিক মনোভাবকে পুরোপুরি নির্মূল করতে পারেনি। উচ্চপদস্থ রাজনৈতিক ক্ষমতা থেকে শুরু করে গৃহস্থালি কাজের অসম বন্টন পর্যন্ত নানা ক্ষেত্রে এই বৈষম্য টিকে ছিল। সোভিয়েত নারীর জীবন তাই ছিল একদিকে প্রগতি ও অধিকারের স্বীকৃতি, অন্যদিকে অদৃশ্য শ্রম ও অসমতার এক জটিল সংমিশ্রণ।

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies