গুরুগ্রাম, ১১ জুলাই, ২০২৫ — সেক্টর ৫৭-এর শান্তিপূর্ণ রাস্তাগুলো আজ শোকস্তব্ধ। ২৫ বছরের প্রতিভাবান টেনিস খেলোয়াড় রাধিকা যাদবের মর্মান্তিক মৃত্যুতে নেমেছে শোকের ছায়া। বৃহস্পতিবার সকালে নিজের বাড়ির রান্নাঘরেই পিতার হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারালেন রাধিকা। তাঁর বাবা দীপক যাদবের গুলিতেই অকালেই থেমে গেল এই তরুণী অ্যাথলেটের স্বপ্নের পথচলা।
রাধিকা শুধু একজন খেলোয়াড় ছিলেন না, ছিলেন লড়াই আর স্বপ্নের প্রতীক। ছোট্ট ক্লাবের কোর্ট থেকে ইন্দোর আর কুয়ালালামপুরের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় তিনি ছুঁয়েছিলেন সাফল্যের মঞ্চ। ইন্টারন্যাশনাল টেনিস ফেডারেশনে তাঁর র্যাঙ্কিং ছিল ১৯৯৯। রাজ্যস্তরের একাধিক পদকজয়ী এই তরুণীকে বন্ধুরা মনে রাখবেন সেই উজ্জ্বল হাসি আর কোর্টে জেদি লড়াইয়ের জন্য, যা ছিল তাঁর নিষ্ঠা আর শ্রমের সাক্ষ্য।
কিন্তু সেই হাসির আড়ালে লুকিয়ে ছিল এক অদৃশ্য সংগ্রাম— স্বপ্নপূরণের তাগিদ আর পরিবারিক কঠোরতার দ্বন্দ্ব। সম্প্রতি রাধিকা নিজের টেনিস অ্যাকাডেমি শুরু করেছিলেন, এমনকি অভিনয় করেছিলেন একটি মিউজিক ভিডিওতে ‘কারওয়াঁ’ শিরোনামে। আত্মবিশ্বাসী, স্বাধীনচেতা হয়ে ওঠা এই মেয়েকে অনেকেই সম্মানের চোখে দেখলেও, পরিবারিক মানসিকতার সঙ্গে তাঁর এই বদল হয়তো মানিয়ে নিতে পারেননি বাবা দীপক।
এই ঘটনা শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়, বরং সমাজে নারীদের স্বপ্নপূরণ আর তথাকথিত ‘সম্মান’ রক্ষার নামে ঘটে যাওয়া নির্মমতার এক মর্মস্পর্শী উদাহরণ।
যারা তাঁকে চিনতেন, তাঁদের বয়ানে উঠে আসছে অজস্র স্মৃতি। ছাত্রছাত্রীদের কাছে তিনি ছিলেন এক প্রেরণা, প্রতিবেশীদের কাছে প্রাণোচ্ছ্বল এক মেয়ে। আজ সেই সব স্মৃতি আর সেই প্রাণোচ্ছ্বলতা হারিয়ে গেছে এক রক্তাক্ত সকালে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। কিন্তু কেন এমন অনর্থক এক মৃত্যু— সেই উত্তর এখনও অধরা।
গুরুগ্রামের সেই কোর্টগুলোতে, যেখানে একসময় রাধিকার পায়ের ছাপ পড়ত, আজ যেন শূন্যতা আর হাহাকার। তাঁর মৃত্যু নতুন করে প্রশ্ন তুলছে— আমাদের সমাজ কবে শিখবে নারীর স্বপ্নকেও সম্মান করতে? আর কোনো প্রতিভা যেন এমন করুণ পরিণতির শিকার না হয়, এই প্রার্থনাই করছে সকলে।
রাধিকা যাদবের মৃত্যুতে থেমে গেল এক স্বপ্ন, কিন্তু রেখে গেল অগণিত তরুণীর লড়াইকে বাঁচিয়ে রাখার এক আহ্বান। তাঁর স্মৃতি থেকে শিক্ষা নিক সমাজ— এটাই হোক রাধিকার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য।