🔴 ওয়াশিংটন, ১০ জুলাই:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন অনেক রাত নেমেছে, যেদিন দেশের মানুষ নিজের শাসক আর সমাজের ওপর আস্থা হারিয়েছে। কিন্তু জেফরি এপস্টিন কেলেঙ্কারি সেই রাতগুলোরও চেয়েও গভীর, অন্ধকার, আর লজ্জাজনক।এক দেশ, যে দেশ সারা পৃথিবীকে বলে “আমরা ন্যায়বিচারের ধ্বজাধারী”, সে দেশের আকাশ আজ কালো হয়ে আছে প্রতারণা, যৌন শোষণ, আর মিথ্যার মেঘে। আর এই কেলেঙ্কারির ছায়ায় আজও দাঁড়িয়ে আছেন সেই ডোনাল্ড ট্রাম্প— যিনি দেশবাসীকে কথা দিয়েছিলেন, “আমি তোমাদের দুর্নীতিমুক্ত স্বপ্নের পথে নিয়ে যাবো।”কিন্তু আজ সেই স্বপ্ন গুঁড়ো হয়ে মাটিতে গড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বাসও।
জেফরি এপস্টিন— একটি নাম, একটি লজ্জা
কখনও আর্থিক মহলে প্রভাবশালী, কখনও অভিজাত পার্টির নায়ক, কখনও সমাজসেবার ছদ্মবেশধারী। কিন্তু তার আসল পরিচয়? এক প্রতারক। এক শোষক। এক দানব।
অর্থনৈতিক প্রতারণা— মানুষের স্বপ্ন লুটে নেওয়া
১৯৯০-এর দশকে ‘টাওয়ার্স ফাইনান্সিয়াল’ নামে একটি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে এপস্টিন একটি বিশাল পঞ্জি স্কিম চালান। মানুষকে মুনাফার লোভ দেখিয়ে বন্ড ও শেয়ার বিক্রি করা হতো, অথচ সেই টাকায় মুনাফা তৈরি না হয়ে চলে যেত আগের লগ্নিকারীদের শোধে আর উচ্চপদস্থদের বিলাসে।
কোটি কোটি ডলার হারিয়ে পথে বসেন হাজারো পরিবার।
যখন কেলেঙ্কারি ফাঁস হলো, ততক্ষণে এপস্টিন নিজেকে আড়াল করে ফেলেছেন। আইন তাকে স্পর্শই করতে পারেনি।
যৌন শোষণ— শৈশব কেড়ে নেওয়া
তারপর আরও বড়ো সত্য বেরোতে থাকে। বিলাসবহুল প্রাসাদ, প্রাইভেট জেট আর দূরদ্বীপের আড়ালে সাজানো হতো ভয়ঙ্কর পার্টি। যেখানে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি আর সেলেব্রিটিদের অতিথি করে আনানো হতো নাবালিকাদের।
তাদের ভয় দেখিয়ে, প্রলোভন দেখিয়ে, জোর করে শোষণ করা হতো। ২০০৮ সালে মামলাটি ধামাচাপা পড়ে যায় একটি বিতর্কিত ‘প্লিয়া ডিল’-এর মাধ্যমে। এপস্টিন অল্প সাজা খেটে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু ২০১৯ সালে নতুন অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর জেলে তার মৃত্যু হয়।মৃত্যুটা আত্মহত্যা? নাকি তাকে মেরে ফেলা হলো?— প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি।
ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক
জেফরি এপস্টিন আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্ক মূলত সামাজিক। তারা বহু পার্টি, আড্ডা, অনুষ্ঠানে একসঙ্গে ছিলেন। ট্রাম্প একসময় তাকে বলেছেন, “চমৎকার লোক, সুন্দরী মেয়েদের পছন্দ করে যেমন আমিও।”পরে ট্রাম্প দাবি করেন, তারা ঝগড়া করে দূরে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—
যখন সবকিছু তার সামনে ঘটছিল, তখন তিনি কিছু বললেন না কেন?
যাদের তিনি বন্ধু ভাবতেন, তারা যদি ভয়ঙ্কর অপরাধে যুক্ত হন, তবে তার দায় তিনি এড়াবেন কীভাবে?
মার্কিন গণতন্ত্রে ঝড়
এপস্টিনের মৃত্যু আর তার ‘ক্লায়েন্ট লিস্ট’ সামনে না আসা নিয়ে আজ তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়েছে।
মার্কিন বিচার বিভাগ ও এফবিআই সম্প্রতি জানিয়েছে— “এপস্টিনের কোনো ব্ল্যাকমেইল ফাইল বা ক্লায়েন্ট লিস্ট নেই।”কিন্তু দেশবাসী এই ব্যাখ্যা মানছে না। এমনকি ট্রাম্পের নিজের ‘মাগা’ সমর্থকেরাও ক্ষিপ্ত। অনেকে বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসন নিজেই তথ্য গোপন করছে।এ নিয়ে ট্রাম্পও প্রকাশ্যে বিরক্তি দেখিয়েছেন, বলেছেন “এটি আমার সম্মানহানির প্রচেষ্টা।”কিন্তু তার নিজের প্রতিশ্রুতি— দুর্নীতি-হীন দেশ গড়ার স্বপ্ন আজ ধুলোয় মিশেছে।
গণতন্ত্রের অশ্রু
এপস্টিনের শিকারে পরিণত মেয়েরা আজও ভয় আর লজ্জা বয়ে বেড়াচ্ছে।হাজারো পরিবার আজও তাদের সবকিছু হারানো ক্ষত বুকে নিয়ে বেঁচে আছে।আর গোটা দেশের মানুষ আজও জানে না— এই অন্ধকার শেষ কোথায়।যে মানুষটি একদিন বলেছিলেন “আমিই তোমাদের রক্ষাকর্তা”, তারই মুখে আজ নীরবতা। আর গণতন্ত্রের মন্দিরে কেবলই শোনা যায় শিকারের কান্না।