দুর্গাপুর, ১৩ আগস্ট, ২০১৭: দুর্গাপুরের ইতিহাসের পাতায় এই দিনটি আজীবন এক কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। ২০১৭ সালের পুরসভা নির্বাচন ছিল গণতন্ত্রের এক ভয়াবহ উপহাস। ওইদিন ভোট হয়নি, হয়েছিল লুঠ। প্রতিটি বুথে, প্রতিটি রাস্তায় একরাশ সন্ত্রাস আর ভয়ের রাজত্ব কায়েম হয়েছিল। ভোটাররা, যারা নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে চেয়েছিলেন, তাঁদের ওপর নেমে এসেছিল এক সীমাহীন অত্যাচার।
ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই শহরের আকাশ ঢেকে গিয়েছিল বোমার ধোঁয়ায়, আর বাতাসে মিশে গিয়েছিল গুলির শব্দ। বাইকে চড়ে বহিরাগত দুষ্কৃতীরা এলাকা জুড়ে তাণ্ডব চালায়। তাদের হাতে ছিল লাঠি, ধারালো অস্ত্র, আর ভয় দেখানোর জন্য বন্দুক। একের পর এক ভোটকেন্দ্র দখল করা হয়। ইভিএম লুঠ হয়, পুলিশ কর্মীদের ওপর আক্রমণ করা হয়, এমনকি তাঁদের রাইফেলও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
এই দিনটি ছিল দুর্গাপুরের সাধারণ মানুষের কাছে এক বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা। যাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে গিয়েছিলেন, তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়, তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। বিরোধীরা এই দিনটিকে 'কালো দিন' হিসেবে চিহ্নিত করে। তাদের অভিযোগ, শাসক দলের ছত্রছায়ায় এই সন্ত্রাস সংঘটিত হয়। এই নির্বাচন ছিল একতরফা, গণতন্ত্রের সমস্ত আদর্শকে পদদলিত করে।
এই নির্বাচনের ফল ছিল এক লজ্জাজনক চিত্র। সমস্ত ৪৩টি ওয়ার্ডেই শাসক দল জয়লাভ করে, যা এক বিরোধীশূন্য দুর্গাপুর পুরসভার জন্ম দেয়। আজও এই দিনের কথা মনে পড়লে দুর্গাপুরের মানুষের মনে এক গভীর ক্ষত তৈরি হয়। সেই ক্ষত আজও দগদগে। গণতন্ত্রের এই হত্যাকাণ্ড দুর্গাপুরের মানুষ কোনোদিন ভুলতে পারবে না। প্রতি বছর ১৩ আগস্ট এলে সেই ক্ষত নতুন করে যন্ত্রণা দেয়, মনে করিয়ে দেয় কীভাবে তাদের মুখের হাসি কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, তাদের অধিকারকে পদদলিত করা হয়েছিল।