সঙ্কটে দেশ ও যুবসমাজ, তাই ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের ডাক দিল ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন (ডিওয়াইএফআই)। বুধবার দার্জিলিংয়ের এক সভা থেকে দেশ ও রাজ্যের যুবদের স্বার্থে এই সংগ্রাম জারি রাখার বার্তা দেওয়া হয়। বক্তারা অভিযোগ করেন, কর্মহীন যুব সমাজের বেকারত্বের যন্ত্রণা নিরসনে সরকার নিষ্ক্রিয়। তাই কাজ ও শিক্ষার দাবিতে এবং কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারের ‘নৈরাজ্য’ ও ‘জনবিরোধী নীতি’র বিরুদ্ধে এই লড়াইকে আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানানো হয়েছে। দার্জিলিঙে ‘যুবশক্তি’ পত্রিকার ৫৮তম প্রতিষ্ঠা দিবসের আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে এই কথা বলেন যুব আন্দোলনের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
দার্জিলিং পাহাড়-সহ রাজ্যের সকল বেকারের জন্য স্থায়ী কাজ ও সকলের জন্য শিক্ষার দাবিতে বুধবার দার্জিলিং চকবাজারে আয়োজিত এই সভায় মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। গোর্খা দুঃখ নিবারক সম্মেলন (জিডিএনএস)-এর ময়দান জনসমাগমে ভরে ওঠে। প্রথমে জিডিএনএস লাইব্রেরিতে সভা হওয়ার কথা থাকলেও, স্থানের অভাবে অবশেষে জিডিএনএস অডিটোরিয়ামে ‘কাজের দাবিতে ঐক্য ও সংহতির লড়াই’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ডিওয়াইএফআই রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে এই সভাকে সফল করতে বেশ কিছুদিন ধরে পাহাড়ে প্রচার ও গণ অর্থ সংগ্রহের কর্মসূচি চালানো হয়েছিল। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে দার্জিলিঙের স্থানীয় মানুষ তো বটেই, সমতল থেকেও বহু মানুষ বুধবারের সভায় যোগ দেন। এদিনের সভায় পাহাড়ের সোনাদা থেকে শহীদ পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
সভার আগে দার্জিলিং রেলওয়ে স্টেশন থেকে একটি বর্ণাঢ্য মিছিল বের হয়, যা শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে চকবাজারে জিডিএনএস-এর সামনে শেষ হয়। এই আলোচনা সভা এবং মিছিলকে ঘিরে পাহাড়ের সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। সভা শুরুর আগে সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন রাজ্য সভাপতি অয়নাংশু সরকার এবং শহীদ বেদীতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সভামঞ্চ থেকে ‘যুবশক্তি’ পত্রিকার নতুন নেপালি সংস্করণ প্রকাশ করেন মহম্মদ সেলিম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গণ আন্দোলনের নেতা সমন পাঠক, দিলীপ সিং, চিকিৎসক আন্দোলনের নেতা ডাঃ সুবর্ণ গোস্বামী, ডিওয়াইএফআই রাজ্য সভাপতি অয়নাংশু সরকার এবং সম্পাদক ধ্রুবজ্যোতি সাহা-সহ অন্যান্য যুব নেতৃবৃন্দ।
মহম্মদ সেলিম তাঁর ভাষণে বলেন, "পাহাড়ের যুবদের জন্য নেপালি ভাষায় যুবশক্তি পত্রিকার সংস্করণ প্রকাশ একটি অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। দেশের যুব সমাজ আজ গভীর সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক—সব দিক থেকেই যুবরা দমনপীড়নের শিকার। পাহাড়ের প্রতিটি জনজাতির মানুষের সঙ্গে নিবিড় জনসংযোগ গড়ে তুলতে হবে এবং তাদের সমস্ত দাবিদাওয়া একত্রিত করে যুবশক্তি পত্রিকায় তুলে ধরতে হবে।" তিনি পত্রিকাটিকে নিয়মিত প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ডিওয়াইএফআই-এর প্রতি আহ্বান জানান।
ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক ধ্রুবজ্যোতি সাহা বলেন, "বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে প্রতি বছর স্কুল সার্ভিস কমিশন, কলেজ সার্ভিস কমিশন ও মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে যুবদের নিয়োগপত্র দেওয়া হতো। কিন্তু ২০১১ সালের পর থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে চরম দুর্নীতি ছেয়ে গেছে। রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী জেলে। পাহাড় বা সমতল, কোথাও কোনও রোজগার নেই। বাংলা, নেপালি, হিন্দিভাষী যুবদের হাতে কোনও স্থায়ী কাজ নেই।" তিনি আরও বলেন, "জাত, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা ও প্রদেশের নামে বিভাজনের রাজনীতি চলছে। একদিকে দেশের সম্পত্তি লুট হচ্ছে, অন্যদিকে মানুষের প্রতিবাদকে হিংসা ও সন্ত্রাস দিয়ে দমন করার চেষ্টা চলছে। দুই সরকারের বিরুদ্ধেই শ্রমিক, কৃষক, ক্ষেতমজুর, বেকার, যুব, ছাত্র, মহিলা-সহ সকল মানুষকে একজোট হতে হবে। তাঁরাই তৃণমূল-বিজেপি-র এই বাইনারি ভাঙবেন রুটি-রুজির প্রশ্নে।"