" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory জন্মাষ্টমী, কীর্তন এবং শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু: ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলা সংস্কৃতি ও সমাজে এক যুগান্তকারী বিশ্লেষণ পর্ব ১ Janmashtami Morning: An Emotional Kirtan and a History of Equality //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

জন্মাষ্টমী, কীর্তন এবং শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু: ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলা সংস্কৃতি ও সমাজে এক যুগান্তকারী বিশ্লেষণ পর্ব ১ Janmashtami Morning: An Emotional Kirtan and a History of Equality

 


জন্মাষ্টমী, কীর্তন এবং শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু - প্রেক্ষাপট ও প্রাসঙ্গিকতা


বাংলা সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যে জন্মাষ্টমী, কীর্তন এবং শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর মধ্যে এক গভীর ও অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বিদ্যমান। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি জন্মাষ্টমী, ভক্তি আন্দোলনের মূল অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে এবং কীর্তন গানের কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু রাধাকৃষ্ণের লীলা বর্ণনার প্রেক্ষাপট তৈরি করে। এই প্রেক্ষাপটে, শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু কেবল একজন ধর্মীয় নেতা ছিলেন না, বরং তিনি কীর্তনকে একটি গণমুখী সামাজিক ও আধ্যাত্মিক বিপ্লবের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বাংলা এবং বৃহত্তর ভারতীয় সমাজে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছিলেন। তাঁর আবির্ভাব এমন এক সময়ে ঘটেছিল যখন বাঙালি সমাজে একটি গভীর শূন্যতা বিরাজ করছিল, বিশেষত অখণ্ড ও উদার মানবতার প্রশ্নে । এই পরিস্থিতিতে, তিনি একটি নতুন জীবন দর্শনের অনুসন্ধান করেন এবং কীর্তনকে এমন একটি মাধ্যমে পরিণত করেন যা জটিল আধ্যাত্মিক ধারণাগুলিকে সাধারণ মানুষের কাছে সহজবোধ্য ও কার্যকর করে তোলে, যার ফলস্বরূপ একটি শক্তিশালী ভক্তি প্রবাহের সৃষ্টি হয়।

এই প্রতিবেদনটি প্রদত্ত উপাত্তের ভিত্তিতে কীর্তন এবং শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর ঐতিহাসিক বিবর্তন, সাংস্কৃতিক তাৎপর্য এবং সামাজিক-ধর্মীয় প্রভাবের একটি বিশদ বিশ্লেষণ প্রদান করবে। যদিও অনুসন্ধানে "বাংলা সংবাদ প্রতিবেদন" উল্লেখ করা হয়েছে, প্রাপ্ত উপাত্তগুলি মূলত এই বিষয়গুলির উপর গবেষণামূলক প্রবন্ধের অংশ। তাই, প্রতিবেদনটি এই উপাত্তগুলির উপর ভিত্তি করে একটি বিশেষজ্ঞ-স্তরের বিশ্লেষণমূলক প্রবন্ধের রূপ নেবে। জন্মাষ্টমীর সরাসরি বিবরণ উপাত্তে না থাকলেও, এটি শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তি এবং লীলা-কীর্তনের মূল ভিত্তি হিসেবে প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করা হবে। এই বিশ্লেষণের মূল ফোকাস থাকবে কীর্তনের উৎস, প্রকারভেদ, বিবর্তন এবং শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবন, দর্শন, তাঁর ভক্তি আন্দোলনের মাধ্যমে কীর্তনের ব্যাপক প্রচার এবং এর সুদূরপ্রসারী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাবের উপর।


কীর্তনের ঐতিহাসিক বিবর্তন ও প্রকারভেদ

কীর্তন বাংলা সঙ্গীতের অন্যতম আদি ও গৌরবময় ধারা, যা সুর, কাব্য এবং নাট্যিক নান্দনিকতার এক নিখুঁত সংমিশ্রণ । সাধারণ মানুষের পক্ষে ঈশ্বর সাধনার একটি সহজ উপায় হিসেবে এর উদ্ভব হয়েছিল । গানের মাধ্যমে ধর্মচর্চার এই ধারা প্রাচীনকাল থেকেই বাংলায় প্রচলিত 

কীর্তনের উৎস ও আদি রূপ

কীর্তন গানের আদি উৎস হিসেবে দ্বাদশ শতাব্দীর কবি জয়দেবের 'গীতগোবিন্দম্' (অষ্টপদী) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । এই গ্রন্থেই কীর্তন গানের প্রাথমিক কাঠামো এবং রাগ-তালের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়, যা পরবর্তীকালের কীর্তন ধারাকে প্রভাবিত করেছে । 'গীতগোবিন্দম্'-এর পদগুলিই 'পদাবলী কীর্তন'-এর উৎপত্তিস্থল বলে বিবেচিত হয় 4। জয়দেবের পর বড়ু চণ্ডীদাসের 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্য থেকেই 'কীর্তন' নামক সঙ্গীতধারার বিকাশ ঘটে বলে ধারণা করা হয় 3। এই সময়েই পালাকীর্তনের ধারাও প্রবর্তিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়, যেখানে রাধাকৃষ্ণের লীলা বিভিন্ন পর্বে ভাগ করে গান ও অভিনয়ের মাধ্যমে পরিবেশন করা হতো 

'পদাবলী ধারা' থেকে 'কীর্তন' নামক সঙ্গীতধারার জন্ম হয় । চণ্ডীদাস, বিদ্যাপতি এবং জ্ঞানদাস প্রমুখ বিশিষ্ট পদকর্তারা এই ধারার সমৃদ্ধিতে অবদান রাখেন । শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাবের পূর্বেই চণ্ডীদাস ও বিদ্যাপতির পদাবলী কীর্তনের কিছু প্রাথমিক রূপ প্রচলিত ছিল, যা তিনি নিজেও শুনতেন । মুসলিম পদকর্তাদের মধ্যে শেখ ফয়জুল্লাহ এবং সৈয়দ মুর্তজাও উল্লেখযোগ্য 

এই বিবর্তন কেবল ভক্তিমূলক কবিতার পাঠ থেকে একটি গতিশীল, অভিনয়-ভিত্তিক শিল্পরূপে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। এতে নাটকীয় উপাদান এবং সুসংগঠিত বাদ্যযন্ত্রের উপাদান (যেমন নির্দিষ্ট রাগ, বিভিন্ন তাল এবং অনন্য শ্রী-খোল বাদ্যযন্ত্র) যুক্ত করা হয়, যা শ্রোতাদের সাথে গভীর সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করে । এই শৈল্পিক বিকাশ কীর্তনকে একটি শক্তিশালী সামাজিক ও আধ্যাত্মিক হাতিয়ার হিসেবে কাজ করার ভিত্তি স্থাপন করে, যা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে একত্রিত ও অনুপ্রাণিত করতে সক্ষম হয়। মুসলিম পদকর্তাদের উপস্থিতি এই শিল্পরূপের প্রাথমিক পর্যায়েই আন্তঃসাংস্কৃতিক প্রভাবের ইঙ্গিত দেয়, যা চৈতন্যদেবের সর্বজনীনতার ধারণার পূর্বসূরি হতে পারে।


কীর্তনের প্রকারভেদ: নামকীর্তন ও লীলাকীর্তন

সাধারণত কীর্তন দু'প্রকার - নামকীর্তন বা নামসংকীর্তন এবং লীলাকীর্তন বা রসকীর্তন । নামকীর্তন বলতে 'হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে / হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে' - এই ষোল পদবিশিষ্ট মন্ত্র বা অন্যান্য বোল সম্বলিত কীর্তন বোঝায় । শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ১৫১০ খ্রিস্টাব্দের দিকে নামকীর্তনের প্রচলন করেন এবং তিনি এর প্রধান প্রচারক ছিলেন 

অন্যদিকে, রাধাকৃষ্ণ এবং গোপী-শ্রীকৃষ্ণের কাহিনী অবলম্বনে যে পালাগান পরিবেশিত হয়, তাকে লীলাকীর্তন বলে । পরবর্তীকালে গৌরাঙ্গ বা শ্রীচৈতন্যের কাহিনী অবলম্বনেও লীলাকীর্তনের প্রচলন হয় । গোষ্ঠ, মান, মাথুর, নৌকাবিলাস, নিমাই সন্ন্যাস ইত্যাদি কয়েকটি প্রধান লীলাকীর্তন । এই লীলাকীর্তনগুলিই 'পদাবলী কীর্তন' নামেও পরিচিত 

কীর্তনের এই দ্বৈত রূপ আধ্যাত্মিক বার্তা প্রচারে একটি পরিশীলিত কৌশলকে প্রতিফলিত করে। নামকীর্তন, তার সহজাত সরলতা এবং পুনরাবৃত্তিমূলক প্রকৃতির কারণে, তাৎক্ষণিক আধ্যাত্মিক সংযোগ এবং ব্যাপক জনসমাবেশের জন্য একটি অত্যন্ত শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে কাজ করে, যা সাক্ষরতা, সামাজিক মর্যাদা বা বিস্তৃত বাদ্যযন্ত্রের প্রশিক্ষণের মতো বাধাগুলি অতিক্রম করতে সক্ষম হয় । এটি সাধারণ মানুষের জন্য ঐশ্বরিকের সাথে একটি প্রত্যক্ষ, আবেগপূর্ণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সম্পর্ক গড়ে তোলে। পক্ষান্তরে, লীলাকীর্তন, যদিও অনভিজ্ঞদের কাছে ততটা সহজলভ্য নাও হতে পারে, তবে এটি গভীর আখ্যানমূলক সমৃদ্ধি, আবেগপূর্ণ সূক্ষ্মতা এবং শৈল্পিক পরিশীলন সরবরাহ করে, যা গভীরতর আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানের জন্য অপরিহার্য। চৈতন্যদেবের নামকীর্তনের উপর জোর ছিল ব্যাপক "সামাজিক আন্দোলন"  শুরু করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যখন বিদ্যমান ও ক্রমাগত বিকশিত লীলাকীর্তন রূপগুলি আন্দোলনের বৌদ্ধিক ও নান্দনিক স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার জন্য শৈল্পিক, ধর্মতাত্ত্বিক এবং আখ্যানমূলক ভিত্তি প্রদান করে।


বাদ্যযন্ত্র ও তাল-রাগের ব্যবহার

কীর্তনে প্রকৃতিভেদে বিভিন্ন ধরনের তাল ব্যবহার করা হয়, যেমন - কাহারবা, দাদরা, একতাল, ছোট-লোফা, বড়-লোফা, রূপক, যৎ, তেওড়া, দোঠুকী, মধ্যম-দশকোশী, দশকোশী, দাশপেড়ে, শশীশেখর, বীরবিক্রম ইত্যাদি । রাগভিত্তিক পরিবেশনাও কীর্তনের একটি বৈশিষ্ট্য । শ্রী-খোল নামক বাদ্যযন্ত্রের উপর ভিত্তি করে এর তাল ব্যবস্থা অন্যান্য ভারতীয় সঙ্গীত থেকে একে স্বতন্ত্র করে তুলেছে 




Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies