আলিপুরদুয়ার, ভারত — আলিপুরদুয়ারের বাতাসে আজ কেবল দুর্নীতির গন্ধ নয়, মানুষের অসহায় কান্নাও মিশে আছে। আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরিষেবার অব্যবস্থা এবং অবহেলার প্রতিবাদে এক ঐতিহাসিক অনশন শুরু হয়েছে। নয় দফা দাবির এই আমরণ অনশন, যার নেতৃত্বে রয়েছেন প্রাক্তন জেলা সভাপতি শান্তনু দেবনাথ, আজ চতুর্থ দিনে পড়েছে। হাসপাতালের অব্যবস্থার বিরুদ্ধে মানুষের এই নীরব প্রতিবাদ এখন শারীরিক দুর্বলতার কাছে মাথানত করছে, কিন্তু তাদের মনোবল অটুট।
হাসপাতালের মর্গে পচে যাওয়া ৩৩টি পরিচয়হীন মৃতদেহ—এ কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। এটি মানবিকতার চূড়ান্ত অবমাননা। বিক্ষোভকারীরা প্রশ্ন তুলছেন, একটি মানুষ সুস্থ হওয়ার আশায় হাসপাতালে আসে, সেখানে তাকে পচা লাশের দুর্গন্ধে অসুস্থ হতে হয়, এ কেমন পরিষেবা? প্রশাসনের নীরবতায় আজ মানুষের জীবন বিপন্ন। দুর্গন্ধ এতটাই যে রুমালে নাক চাপা দিয়েও সেখানে প্রবেশ করা অসম্ভব।
মানবিকতার চেয়ে রাজনৈতিক বিভাজন বড়
শুধু তাই নয়, হাসপাতালে ডাক্তার এবং কর্মীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অব্যবস্থা এবং নিরাপত্তার অভাবের অভিযোগ উঠে আসছে। একজন মহিলা নেত্রী হতাশার সঙ্গে বলেছেন, “আমাদের এই দাবিগুলো সম্পূর্ণ যুক্তিযুক্ত। হাসপাতালের রোগীকর্মী ও নারী-পুরুষের সুরক্ষা আজ প্রশ্নের মুখে। এই অনশনের চতুর্থ দিনে আমার প্রেসার ফল করেছে, সুগার কমেছে, কিন্তু আমি জানি এই কষ্ট জনগণের জন্য। যতক্ষণ না কর্তারা আমাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিচ্ছেন, ততক্ষণ এই অনশন চলবে।”
এই মানবিক আন্দোলনের পাশেও রাজনীতির কাঁটা বিছিয়ে আছে। দলেরই বর্তমান নেতৃত্বের সঙ্গে প্রাক্তন নেতৃত্বের মতবিরোধ এখন প্রকাশ্যে। এক যুব নেতা আক্ষেপ করে বলেছেন, “মানুষের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে দলের সমর্থন লাগবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যখন একজন যুব নেতা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন, তখন দলের একাংশ পিকনিক করছে।” এই দ্বন্দ্ব স্পষ্ট করে দেয় যে, মানবিকতার চেয়ে রাজনৈতিক বিভাজন আজ বড় হয়ে উঠেছে।
কিন্তু এই আন্দোলন কেবল দলের নয়, এটি আলিপুরদুয়ারের প্রতিটি সাধারণ মানুষের। যে মানুষগুলো দিনের পর দিন হাসপাতালে হেনস্তার শিকার হন, যাদের চিকিৎসা মেলে না, সেই মানুষদের যন্ত্রণা আজ এই অনশনের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পাচ্ছে। বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, প্রয়োজন হলে তারা শুয়ে থেকেও আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। কারণ, তাদের কাছে দলের চেয়ে মানুষের সম্মান ও অধিকার অনেক বেশি মূল্যবান। যদি এই দাবির জন্য তাদের জীবন দিতে হয়, তাতেও তারা প্রস্তুত।