পাটনা: ভারতের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বিহারে শুরু করেছেন এক ঐতিহাসিক 'ভোটার অধিকার যাত্রা'। এই ১৬ দিনের দীর্ঘ পদযাত্রাটি কেবল একটি রাজনৈতিক অভিযান নয়, বরং দেশের গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার রক্ষার এক তীব্র আন্দোলন। ১৭ই আগস্ট সাসারাম থেকে শুরু হওয়া এই যাত্রাটি ১লা সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে পাটনার গান্ধী ময়দানে এক বিশাল জনসভার মাধ্যমে শেষ হবে।
কেন এই যাত্রা?
এই পদযাত্রার মূল কারণ হলো নির্বাচন কমিশনের 'স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (SIR)' নামক ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়া, যা নিয়ে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। কংগ্রেস এবং তার মিত্র দলগুলোর অভিযোগ, এই প্রক্রিয়ায় পক্ষপাতদুষ্টভাবে লক্ষ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সমাজের পিছিয়ে পড়া, সংখ্যালঘু এবং অভিবাসী শ্রমিকদের নাম ইচ্ছাকৃতভাবে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই যাত্রার মাধ্যমে রাহুল গান্ধী 'এক ব্যক্তি, এক ভোট'—গণতন্ত্রের এই মৌলিক নীতিটি রক্ষার জন্য জনগণের কাছে সরাসরি পৌঁছাতে চাইছেন। যাত্রার স্লোগান, "আব কি বার, ভোট চোরোঁ কি হার," যা ভোটার তালিকার এই কথিত কারচুপির বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভকে তুলে ধরছে।
দিল্লির প্রতিবাদ ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
এই যাত্রা শুরুর কয়েকদিন আগেই, গত ১১ই আগস্ট, রাহুল গান্ধী দিল্লিতে একটি প্রতিবাদ মিছিলের নেতৃত্ব দেন। পার্লামেন্ট থেকে নির্বাচন কমিশন পর্যন্ত সেই মিছিলে তিনি অভিযোগ করেন যে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কারচুপি করছে। যদিও পুলিশি বাধার কারণে মিছিলটি নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে পৌঁছাতে পারেনি, এবং রাহুল গান্ধীসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র বিরোধী নেতাকে আটক করা হয়েছিল, এই ঘটনাটি বুঝিয়ে দেয় যে বিরোধী দলগুলো ভোটার অধিকারের বিষয়টি কতটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। বিরোধী জোট 'ইন্ডিয়া'র নেতারা বলছেন, এই প্রতিবাদ কোনো রাজনৈতিক কৌশল নয়, বরং দেশের সংবিধান ও গণতান্ত্রিক কাঠামোকে সুরক্ষিত করার একটি জরুরি পদক্ষেপ।
যাত্রাপথের বিস্তারিত
'ভোটার অধিকার যাত্রা' বিহারের ২০টিরও বেশি জেলার মধ্যে দিয়ে ১৩০০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ অতিক্রম করবে। এতে পদযাত্রা, জনসভা এবং জনসাধারণের সাথে সরাসরি কথোপকথনের এক মিশ্র রূপ দেখা যাবে। এই যাত্রার মূল লক্ষ্য হলো যুবসমাজ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে একত্রিত করা। যাত্রাপথে বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় নেতা ও জনগণের সঙ্গে রাহুল গান্ধীর বৈঠক করার কথা রয়েছে।
বিরোধী জোটের সমর্থন
এই যাত্রায় কংগ্রেস একা নয়। আরজেডি প্রধান লালু প্রসাদ যাদব এবং তেজস্বী যাদব, বাম দলসমূহ এবং ইন্ডিয়া জোটের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নেতারা এই যাত্রায় পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন। এটি আসন্ন বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে একতার একটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে। যদিও ক্ষমতাসীন এনডিএ এই যাত্রাকে একটি রাজনৈতিক চমক হিসেবে দেখছে এবং ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ বলে দাবি করছে, রাহুল গান্ধীর এই পদক্ষেপ বিহারের রাজনৈতিক সমীকরণকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে।
সব মিলিয়ে, রাহুল গান্ধীর 'ভোটার অধিকার যাত্রা' শুধুমাত্র বিহারের রাজনীতিতে নয়, বরং সমগ্র ভারতের নির্বাচনী ব্যবস্থায় ভোটার অধিকার ও স্বচ্ছতার বিষয়টি নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। আসন্ন দিনগুলোতে এই যাত্রা কতটা প্রভাব ফেলে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।