আজ, সেই দিনটি যা পশ্চিমবঙ্গের বাম রাজনীতির আকাশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের জন্মদিন । আজ কমরেড মানব মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিন বার্ষিকী । বামপন্থী রাজনীতির একনিষ্ঠ সৈনিক, দক্ষ প্রশাসক এবং আপাদমস্তক একজন শিক্ষানুরাগী মানুষ হিসেবে তিনি চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।, রেখে যান তাঁর কর্মময় জীবনের অগণিত স্মৃতি এবং শূন্যস্থান যা কোনোদিন পূরণ হবার নয়।
একজন রাজনৈতিক কর্মী থেকে দক্ষ প্রশাসক
মানব মুখোপাধ্যায় কেবল একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ গণনেতা। ছাত্রাবস্থায় বাম রাজনীতির সাথে তাঁর হাতেখড়ি। মাত্র ২২ বছর বয়সে, ১৯৮৭ সালে তিনি বালিগঞ্জ আসন থেকে প্রথমবার বিধায়ক নির্বাচিত হন এবং দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে তিনি সেই এলাকার প্রতিনিধিত্ব করেন। এই সময়কালে তিনি রাজ্যের যুব সমাজ, শ্রমজীবী মানুষ এবং সংস্কৃতিপ্রেমীদের কাছে এক অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন।
১৯৯৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বামফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রী হিসেবে তাঁর অবদান ছিল অসামান্য। তিনি যুবকল্যাণ, পর্যটন, পরিবেশ, তথ্যপ্রযুক্তি এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতর সামলেছেন। বিশেষ করে, তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী হিসেবে তাঁর দূরদর্শিতা আজও প্রশংসিত হয়। তাঁর নেতৃত্বেই রাজ্যে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের ভিত্তি স্থাপন হয়, যা পরবর্তীকালে পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
মানবিকতার প্রতিচ্ছবি
মানুষ হিসেবে মানব মুখোপাধ্যায় ছিলেন অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং সংস্কৃতিমনা। তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল আপসহীন, তবে একই সাথে নম্র এবং বিনয়ী। তিনি ছিলেন একজন অসাধারণ বক্তা ও লেখক, যিনি 'যুবশক্তি' পত্রিকার সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর লেখনী এবং বক্তব্য যুব সমাজকে সঠিক পথের দিশা দেখাত।
মৃত্যুর পর তাঁর দেহ দান করার সিদ্ধান্তটি তাঁর উদার মানসিকতা এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার চূড়ান্ত প্রমাণ। এই কাজটি তিনি নিঃশব্দে করে গেছেন, যা তাঁর রাজনৈতিক জীবন এবং ব্যক্তিগত আদর্শের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
মানব মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে বাংলার রাজনীতিতে এক বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। বামপন্থী আন্দোলনের অন্যতম মুখ হিসেবে তাঁর অবদান, তাঁর আদর্শ এবং তাঁর কর্মময় জীবন চিরকাল অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। আজ তাঁর জন্ম বার্ষিকীতে, আমরা এই মহান ব্যক্তিত্বের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর স্মৃতি আমাদের রাজনৈতিক এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা বারবার মনে করিয়ে দেবে।