কাটোয়া: বিপ্লবী সুবোধ চৌধুরীর প্রয়াণ দিবসে কাটোয়ার মাটি যেন এক অন্য মেজাজে কথা বলছিল। যে মাটিতে একদিন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ কাঁপিয়েছিলেন এক তরুণ বিপ্লবী, সেই মাটিতেই আজ তার স্মৃতির বেদিতে শ্রদ্ধা জানাতে জড়ো হয়েছিলেন শত শত মানুষ। বিপ্লবী সুবোধ চৌধুরীর স্মৃতিকে সামনে রেখে সিপিআই(এম) এর উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভা যেন শুধুমাত্র রাজনৈতিক বক্তৃতা ছিল না, ছিল এক গভীর আবেগ আর প্রতিজ্ঞার বহিঃপ্রকাশ।
'নয়া উদারবাদী অর্থনীতি, বিভাজনের রাজনীতি এবং নয়া ফ্যাসিবাদের বিপদ' শীর্ষক এই সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্টির বর্ষীয়ান নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তার প্রতিটি শব্দে মিশে ছিল লড়াইয়ের আগুন আর হতাশার বেদনা। তিনি বলেন, "বিপ্লবী সুবোধ চৌধুরীর আত্মত্যাগ শুধু অতীত নয়, বর্তমানের লড়াইয়ের প্রেরণা। আজ যখন দেশের বুকে বিভাজনের বিষ ছড়ানো হচ্ছে, যখন গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা চলছে, তখন সুবোধ চৌধুরীর মতো লড়াকু সৈনিকদের আদর্শ আমাদের পথ দেখায়।" তার কণ্ঠে শোনা যায় ফ্যাসিবাদ বিরোধী মঞ্চ গড়ার দৃঢ় অঙ্গীকার, যা শুধু স্লোগান নয়, যেন এক ঐতিহাসিক শপথ।
সভার শুরুতে রবীন্দ্র পরিষদ সভাকক্ষ মুখরিত হয়েছিল ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সংগ্রামী শাখার শিল্পীদের গানে। সেই গানগুলো যেন ইতিহাসের পাতা থেকে তুলে এনেছিল বিপ্লবের আগুন আর ত্যাগের মহিমা। সেই গানে মিশেছিল এক বেদনা, যা জন্ম দিয়েছিল নতুন দিনের স্বপ্নের। তুহিন ব্যানার্জীর কণ্ঠেও শোনা যায় সংগ্রামের সুর।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন পার্টির নেতা অচিন্ত্য মল্লিক এবং জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেন, যারা সুবোধ চৌধুরীর আত্মত্যাগের গভীরতা তুলে ধরেন। সিপিআই(এম) কাটোয়া শহর এরিয়া কমিটির সম্পাদক প্রকাশ সরকারের সঞ্চালনায় সভাটি এক নতুন মাত্রা পায়।
সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্ত ছিল যখন বিশিষ্ট শিক্ষক অরিন্ময় চট্টোপাধ্যায় 'জ্যোতি বসু সেন্টার ফর সোশ্যাল স্টাডিজ'-এর জন্য কুড়ি হাজার টাকার চেক সূর্যকান্ত মিশ্রের হাতে তুলে দেন। এ যেন শুধু অর্থ সাহায্য নয়, এ ছিল এক শিক্ষকের পক্ষ থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক বার্তা - যে আদর্শের জন্য বিপ্লবী সুবোধ চৌধুরী জীবন দিয়েছেন, সেই আদর্শ যেন শিক্ষার আলোকবর্তিকা হয়ে জ্বলে থাকে।
সভার আগে বিপ্লবী সুবোধ চৌধুরীর আবক্ষ মূর্তিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান পার্টির নেতৃত্ব। সেই মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল, যেন সময়ের চাকা ঘুরে গেছে। এক শতাব্দীর পুরোনো সেই বিপ্লবের আগুন যেন আজও জ্বলছে কাটোয়ার মানুষের হৃদয়ে। এই সভা যেন শুধু একটি রাজনৈতিক আলোচনা ছিল না, ছিল এক আদর্শকে বুকে ধরে সামনের কঠিন পথ পাড়ি দেওয়ার শপথ।