কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ – তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (TMCP) প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপনের মধ্যেও রাজ্য জুড়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ থাকা, ক্যাম্পাসে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট রাজ চালানোর অভিযোগ এবং একাধিক পৌরসভায় ভোট না হওয়া—এই বিষয়গুলি শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে (TMC) 'গণতন্ত্র বিরোধী' হিসেবে তুলে ধরছে।
বছরের পর বছর বন্ধ ছাত্র ভোট
পশ্চিমবঙ্গের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে।
শিক্ষাঙ্গনে গণতন্ত্রের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে স্টুডেন্টস' ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (SFI)। ছাত্র ভোটের দাবিতে তারা একাধিকবার বিক্ষোভ, ধর্মঘট এবং শিক্ষা ভবনের সামনে মিছিল করেছে। এই কর্মসূচিতে পুলিশি ধরপাকড় ও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে, যা ছাত্র সমাজের মধ্যে হতাশা আরও বাড়িয়েছে।
ক্যাম্পাসে টিএমসিপি-র ‘সিন্ডিকেট’ রাজ
ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ থাকায় টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে ‘সিন্ডিকেট’ রাজ চালানোর অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, নির্বাচিত কোনো ছাত্র সংসদ না থাকা সত্ত্বেও টিএমসিপি-র নেতারা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া, আসন বণ্টন এবং এমনকি নির্মাণ কাজের ঠিকাদারিও নিয়ন্ত্রণ করছে। অভিযোগ রয়েছে যে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে টিএমসিপি-র সদস্যরা অশিক্ষক বা প্রশাসনিক পদে স্থায়ীভাবে নিযুক্ত হচ্ছেন, যা ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোতে তাদের প্রভাব আরও বাড়াচ্ছে। এর ফলে কলেজগুলোতে অবাধ ক্ষমতা ও ‘দাদাগিরি’র পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন, যা শিক্ষাঙ্গনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট করছে।
পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে বিলম্ব
ছাত্র ভোট ছাড়াও, রাজ্যের স্থানীয় স্তরের গণতন্ত্রেও অচলাবস্থার অভিযোগ উঠেছে। বিরোধী দলগুলো, বিশেষ করে বিজেপি, অভিযোগ করেছে যে তৃণমূল সরকার একাধিক পৌরসভায় নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন করাচ্ছে না। ভোট পিছিয়ে দেওয়ার জন্য প্রশাসনিক এবং আইনি জটিলতাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে তাদের দাবি। সমালোচকদের মতে, ভোট না করিয়ে প্রশাসক বসিয়ে বা পুরোনো বোর্ডের মেয়াদ বাড়িয়ে শাসক দল ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইছে।
সব মিলিয়ে, ছাত্র ভোট এবং পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে এই দীর্ঘমেয়াদি অচলাবস্থা শাসক দলের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। টিএমসিপি-র প্রতিষ্ঠা দিবসের এই আবহে গণতান্ত্রিক অধিকারের এই প্রশ্নগুলো আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।