জামিনে মুক্ত ফুল্লরা মন্ডল
গোরু-কয়লা পাচার, চাকরি চোরদের উৎপাতের মাঝে এক বাম সৈনিকের মুক্তি যিনি ভয় তুচ্ছ করেই মাওবাদী সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করেছিলেন।এখন বয়স ৬৯। ২০০৯ সাল থেকে ঘরছাড়া আর ২০১৪’র পর থেকে জেলবন্দী ।
ফুল্লরা মন্ডল। দিনবদলের স্বপ্ন দেখা চেতনা, করাকে ঘৃণা করা চেতনা, কমিউনিস্ট পার্টি, জীবনবোধ- সব, সবকিছুকেই আরো একবার সিক্ত করে দিলো শহরের বৃষ্টিভেজা রাজপথে যখন খবর তিনি মুক্ত।
লালগড় বাজারের সামনে সিপিআই(এম) কার্যালয়ের সামনে মাওবাদীদের জান্তব উল্লাস আজো খবরের কাগজের ছবি জ্বলজ্বল করছে।যখন জেলে তখন বৃদ্ধা মা ছিলেন অসুস্থ, এখন মারা গেছেন। জেলে থাকাকালীন মার মৃত্যুর খবর জানলেও শেষবারের জন্য দেখা করার সুযোগও পাননি। মায়ের কথা বলতেন খুব। জেলেও স্বপ্ন দেখতেন জঙ্গলমহলে আদিবাসী মহিলাদের সংগঠিত করার পরিকল্পনার কথা।
মাওবাদী-তৃণমূলী পরিকল্পিত নৈরাজ্যের ফসল-নেতাই। ততদিনে জঙ্গলমহলের ২৭০জনের বেশি শহীদ হয়েছেন। শুধু বিনপুর ব্লকেই সেই সংখ্যা ৭০ পেরিয়েছে। ততদিনে কানাইশোর পাহাড়ের ঢালে ফাগু বাস্কের দেহ । ধরমপুর পার্টি অফিসের সামনে সালুকে সরেনের দেহ । এক রাতে ধরমপুরে পাঁচ যুবককে তুলে নিয়ে গিয়ে ‘গণ-আদালতের’ নামে খুন করার পরে তাঁদের মা-স্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়েছে।গণশক্তির পাতায় সেই নৈরাজ্যের বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছিল তৎকালীন সময়ে।
এক সপ্তাহ আগেই জঙ্গলমহলের লালগড়ে সন্ত্রাসমুক্তির সমাবেশ, হাজার হাজার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সেই সমাবেশ। তার ঠিক এক সপ্তাহ পরেই নেতাই!তখন তার বয়স ৫৬। তিনি ছিলেন মহিলা সমিতির নেত্রী। সিপিআইএম জেলা কমিটির সদস্য। তৃণমূলের করা এফআইআর’র তাঁরও নাম ছিল কী লেখা ছিল এফআইআরে?
নির্বিচারে সশস্ত্র শিবির থেকে গুলি চালাতে চালাতে মানুষ খুন করতে করতে নদীর পাড় ধরে বেলাটিকরির দিকে যে বন্দুকবাজ পালিয়ে গিয়েছিল, তাদের দাবি তাঁরই নাম নাকি ফুল্লরা মন্ডল। অসুস্থ পঞ্চাশোর্ধ মহিলা মহিলা এক হাতে বন্দুক নিয়ে গুলি চালাতে চালাতে মাঠ, খাল,বিল জঙ্গল পেরিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে- দুর্ধর্ষ এই অ্যাকশন চিত্র তৎকালীন সংবাদ মাধ্যম মেনে নিয়েছিল।
ফুল্লরা মন্ডল নাকি এক হাতে রাইফেল দিয়ে গুলি করতে করতে নদীর পার ধরে বেলাটিকরি হয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। আর সেই গুলিতে নাকি মাওবাদী ও সাধারণ মানুষজন মারা যায়! সেই বিবৃতি দিয়ে এফআইআর হয়। তার ভিত্তিতেই সিবিআই তদন্তও হয়।
আর ফুল্লরা মন্ডল? বছরের পর বছর ঘরছাড়া থাকার পরেও যে ঝান্ডা ছাড়ার কথা দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেন না ষাট পেরোনো অসুস্থ এক মহিলা।জেল জীবন ও ঘরছাড়া পার্টি জীবনেই মা’ মারা গেছেন, দাদাও মারা গেছেন.তাঁদের শেষবারের জন্যও দেখতে পারেননি।প্যারোলে ছাড়া পাননি শেষবার দেখার জন্যও।
তবুও জেলে বসেও দুনিয়া জুড়ে লাল ঝান্ডার খবর পড়ে চোয়াল শক্ত হয় তাঁর। জেলে নিয়মিত গণশক্তিও পড়তেন ।আট বছর জেল জীবন। কৃষক পরিবারে জন্ম।পড়াশুনো শেষে পার্টির ডাকে সর্বক্ষনের জীবন, জঙ্গলমহলের মহিলাদের সংগঠিত করার লড়াই শুরু সেই থেকে আট বছর জেলের ভিতর, আরো অনেক বছর ঘরছাড়া , সব হারিয়েছেন।
তবুও বিশ্বাস হারাননি, খাদের কোনা থেকে ফের প্রত্যাঘাতের মেজাজে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, গভীর খাদের দিকে পিঠ রেখেই।শর্ত স্বাপেক্ষে জামিন পেয়েছেন দেশের শীর্ষ আদালত থেকে।