" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অরাজনীতির মঞ্চ সংস্কৃতিঃ ইতিহাসের দু কণা //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অরাজনীতির মঞ্চ সংস্কৃতিঃ ইতিহাসের দু কণা

 



স্বপ্নদীপের হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত ছাত্র সৌরভ চৌধুরীর বয়ানের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার হয়েছে মনোতোষ আর দীপশেখর। মোট তিনজন অভিযুক্তের রাজনৈতিক পরিচয় হল- 

১) সৌরভ চৌধুরী- বিজ্ঞান বিভাগ- ডাবলু টি আই 

২) মনোতোষ- কলা বিভাগ - ফ্যাস 

৩) দীপশেখর- কলা বিভাগ- ফ্যাস 


এরা প্রত্যেকে মেইন হোস্টেলের আবাসিক। এই দলগুলো কী? খায় না মাথায় দেয়? আপনাকে আর মুখ ঘোরালে চলবেনা। হাফ কথা জেনে পাশ কাটিয়ে গেলেও চলবেনা। আসুন, ইতিহাস ঘেঁটে দেখি কারা এরা?  


যাদবপুরের রাজনীতির জগতে ঢুকলে অদ্ভুত কিছু অজানা নাম শোনা যায়। ফ্যাস, ডিএসএফ, ডাবলু টি আই এরকম কিছু দলের কথা। দল কিন্তু দল নয়। বললে তারা রাগ করেন। তারা ইস্যুভিত্তিক রাজনীতির কথা বলেন। বলেন, এটা একটা ফ্রি পোলিটিকাল প্ল্যাটফর্ম। এখানে কমন মিনিমাম অ্যাজেন্ডার বেসিসে সকল মতাদর্শের মানুষ একজোট হতে পারেন। সবাই ডিসিশন নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। সব সিদ্ধান্ত উঠে আসে জেনারেল বডি মিটিং-এর মাধ্যমে। আমরা ক্ষমতার কেন্দ্রিকতার বিরূদ্ধে। আপনার শুনে মনে হবে এ তো গণতন্ত্র ম্যাক্স প্রো! এখানে আপনার মতো নবাগতও সর্বাধিক গুরুত্ব পেতে পারেন মতের বলিষ্ঠতার জোরে। 


তারপর কিছুকাল অতিক্রান্ত হবে। আপনি আরও কিছু নাম ধোঁয়া ধোঁয়া, ভাসা ভাসাভাবে শুনতে পাবেন। প্রাচীনেরা শুনবেন ট্রিপল এফ, মধ্যযুগীয়ররা শুনবেন ছাত্র আন্দোলন প্রস্তুতি বা ক্যাপের নাম। বর্তমানের জনতা শুনবেন কালেকটিভের নাম। আস্তে আস্তে পরিচিতি যত বাড়বে তত বুঝবেন কোনও মঞ্চই উইদাউট ইন্টারেস্ট নয়। এই মঞ্চগুলি শো কেস মাত্র। তার ভিতরে বিভিন্ন উইং আছে আর উইংগুলো ধরে রাখে এই ক্রমাগত নাম বদলে চলা অরগানাইজেশনটি যাদের মুখগুলো এক থাকে। আজ নয়, টানা ৪০ বছর ধরে এরা তথাকথিত উচ্চমার্গের ইউনিভার্সিটিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। 


এরা কারা? ভাঙা ইতিহাসের পথ ধরে চললে এদের রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া গেলেও যেতে পারে। নকশালদের কোনও একটা ফ্র্যাকশন থেকে মতবিচ্যুতির কারণে (পড়ুন স্বার্থসিদ্ধির কারণে) এদের কতিপয় নেতা বেরিয়ে এসেছিল। তারা একটা মাস্টার প্ল্যান ছকে। কোনও দলীয় রাজনীতি নয়। নির্দলীয় রাজনীতির মোড়কে মঞ্চ তৈরি করে তার ভিতর দিয়ে দলের কাজ চালানো হবে। ক্ষমতায় আসা এদের লক্ষ্য হবে না। বরঞ্চ ক্ষমতায় থাকা বা প্রধান বিরোধী হয়ে থাকা দলকে ভিতর থেকে কন্ট্রোল করা হবে এদের প্রধান উদ্দেশ্য। এই যে তিন 'অরাজনৈতিক' মঞ্চের নাম শুনছেন বারবার- ডিএসএফ, ডাবলু টি আই, ফ্যাস; এদের প্রত্যেকের ভিতরে কন্ট্রোলিং পার্টে রয়েছে কালেক্টিভের ছাত্রনেতারা। 

-কী? অন্য কোনও দলের গঠনকাঠামোর সঙ্গে মিল পাচ্ছেন তো? 

-হ্যাঁ, পাবেন অবশ্যই। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস) দলটির কার্যপরিচালনাও ঠিক এভাবেই হয়। 


এই প্ল্যানে এরা প্রধান শত্রু ঠাউরেছিল ছাত্র সংগঠন এসএফআইকে। 

কেননা তারা সংগঠিত ছাত্র রাজনীতির প্র্যাকটিস করে। এদের ভিতর বাসা বাঁধা অনেকটা কঠিন। তাই দলতন্ত্রের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার নামে বছরেরে পর বছর চরম আক্রমণ চালায় এসএফআই-এর উপরে।


ভরা বাম আমলেও এদের কেশাগ্র স্পর্শ করা যায়নি। কেন? 

কেননা তারা প্রত্যেক বিরোধী দলের সঙ্গে যোগসাজশ রেখে চলত। এইসব ইউনিভার্সিটির লেফট ওরিয়েন্টেশন সকলেরই জানা। অতএব যে সিপি বা টিএমসিপি বা এবিভিপি এইসব ইউনভার্সিটির মধ্যে নিজেদের ঘাঁটি গাড়তে চাইত তারা সহজেই এসব মঞ্চে চলে আসত। তারপর একটা সুন্দর আন্ডারস্ট্যাণ্ডিং তৈরি হত। 


এই আণ্ডারস্ট্যান্ডিং ভেঙে যেত সরকার বদলালে। যেমন ২০১১ তে বদলায়। আপনারা কি জানেন ২০১১ সাল অব্দি ফ্যাস-এর মধ্যে থেকে ছাত্র আন্দোলন প্রস্তুতি এবং টিএমসির নেতারা একসঙ্গে কাজকর্ম চালিয়েছেন? ১২ থেকে তারা আলাদা হন। আমি অন্তত ১০ টা ছাত্রনেতার নাম বলে দেব যারা ছাত্রজীবনে ফ্যাস করত। তারপর চালে ভুল করে ১৫ তে আন্দোলনের উপর লাঠি চালায় তৃণমূলের পুলিশ। যাদবপুরে তৃণমূলের ক্ষমতায়ন কিছুটা ডিলেইড হয়। আপনি জানেন, এই ডিএসএফের নেতাদের মধ্যে অন্যতম বিজেপির মোহিত রায় আর তৃণমূলের তন্ময় ঘোষ? আজও তৃণমূল আর কালেক্টিভের মধ্যে অসাধারণ আণ্ডারস্ট্যান্ডিং! স্বপ্নদীপের হত্যার ঘটনা নানারকম ন্যারেটিভ উঠে আসছে। কখনও দেখেছেন একটি তৃণমূলের ছাত্রনেতা স্বাধীন ছাত্র রাজনীতির মঞ্চগুলো নিয়ে টুঁ শব্দ করছে? হোস্টেলের নারকীয় অত্যাচার নিয়ে টুঁ শব্দ করছে? তারা প্রাণপণে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে এই র‍্যাগিং বাংলা বিভাগের মধ্যে হয়েছে। 


এই দলগুলির সম্মিলিত ঘাঁটি ছিল যাদবপুর মেইন হোস্টেল। ক্যাম্পাস থেকে কিছুটা দূরে। এটাকে তারা মুক্তাঞ্চল আখ্যা দিত। এসএফআইকে এখানে ৩০ বছর ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আমার সুদীর্ঘ ক্যাম্পাস লাইফে আমি মাত্র তিনজন এসএফআইকে মেইন হোস্টেলে কিছুদিনের জন্য থাকতে দেখেছি। তারা কী সাঙ্ঘাতিক বিবমিষাকর অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গেছে সে আপনাদের না শোনাই ভালো। প্রত্যেকেই কিছুদিনের মধ্যে হোস্টেল ছাড়তে বাধ্য হয়। কিন্তু তৃণমূলের ছাত্রনেতারা বহাল তবিয়তে কাটিয়েছেন মেইন হোস্টেলে। সেখান থেকে তারা রাজনীতি করেছেন। 'ছেলে ধরেছেন'। 


এসএফআইকে ক্যাম্পাসে বহুযুগ ধরে এদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে। হচ্ছে। পরবর্তীতেও হবে। এদের মঞ্চের তলায় লুকিয়ে থাকা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এবং  এবিভিপির বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে। 


আজ দেখবেন এদের অনেকেই বলছে এ লজ্জা যাদবপুরের। এ লজ্জা বাম রাজনীতির। এ লজ্জা আমাদের সব্বার। দিনের পর দিন নারকীয় কাজকর্ম করে আসা ওই অরাজনীতির হোতাদের গুণ্ডাগিরির দায় কেন যাদবপুরের সাধারণ ছাত্রছাত্রী নেবে বলতে পারেন? কেন এসএফআই, আইসা বা অন্যান্য ছোট ছোট বাম ছাত্র রাজনীতির দলগুলো নেবে বলতে পারেন? আমাদের ছাত্ররা যারা হোস্টেলে থাকত তাদের তো মারের ঘা শুকাত না এদের সঙ্গে লড়তে গিয়ে। 


আপনারা কিছুদিন পরে কালেক্টিভ নামটা আর শুনতে পাবেন না। সাপ তার খোলস বদলাবে। আসবে নতুন নাম। কিংবা এই মঞ্চ রাজনীতির প্রয়োজন ফুরিয়েছে। শাসক তাদের ছেঁটে ফেলবে। ক্ষমতার হস্তান্তর হবে রাজার হাতেই। মনসবদারদের দরকার হবে না। সরাসরি তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নিজেদের নামেই চালাবে। 

  

স্বপ্নদীপের হত্যার প্রেক্ষিতে কেন এতগুলো 'অপ্রয়োজনীয়' কথা বললাম? মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করছি? ছি! অমানবিক? নাহ্‌! 

যারা গোটা ব্যাপারটাকে জেনারালাইজ করছেন তারা বরঞ্চ সেই কাজ করে চলেছেন। কেউ বুঝে, কেউ না বুঝে। এর মাধ্যমে তিনটে কাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। 


১) বাম রাজনীতির সম্পর্কে চূড়ান্ত ভুল ও নোংরা ন্যারেটিভ বাজারকে খাইয়ে দেওয়া। (স্ট্রং আইটি সেলের মাধ্যমে) 


২) তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ও এবিভিপির প্রচার ও প্রসার ঘটানো যারা আদপে এইসব মঞ্চের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিল এতদিন। (মুখোশ পরে)


৩) সরকারি কলেজ ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে নেগেটিভ প্রচারকে তুঙ্গমাত্রায় নিয়ে যাওয়া যা প্রাইভেটাইজেশনের পথকে সুগম করবে। (এই পয়েন্ট অনেক শাটলভাবে উঠে আসছে। সামনাসামনি বুঝবেন না।) 

 

সমস্যার সমাধান করতে গেলে তার আদ্যোপান্ত জানতে হয়। স্বপ্নদীপের হত্যা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা কতগুলো বেপরোয়া মানুষের আফটার ডিনার রিফ্রেশমেন্টের শিকার হয়েছে ছেলেটি। এরকম আরও অনেকে হবে যদি আপনি পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস থেকে মুখ ফিরিয়ে বসে থাকেন।

_বিহঙ্গ দত্তর লেখা_

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies