ব্রিটেনের যুদ্ধের শেষ বীর জন হেমিংওয়ের প্রয়াণ: একটি যুগের সমাপ্তি
ব্রিটেনের যুদ্ধের শেষ জীবিত পাইলট গ্রুপ ক্যাপ্টেন জন হেমিংওয়ে ১০৫ বছর বয়সে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম স্মরণীয় অধ্যায় এবং ব্রিটেনের গৌরবগাথার শেষ জীবন্ত সাক্ষী ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যু শুধু একজন মানুষের প্রস্থান নয়; এটি এক সাহসী প্রজন্মের অবসান।
জন হেমিংওয়ের জীবনযুদ্ধ
১৯১৯ সালে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে জন্মগ্রহণ করেন জন হেমিংওয়ে। তিনি ১৯৩৮ সালে রয়্যাল এয়ার ফোর্সে যোগ দেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হকার হারিকেন বিমানে যুদ্ধ করেন। ১৯৪০ সালের সেই ভয়ঙ্কর দিনে, যখন ব্রিটেনের আকাশে লুফৎওয়াফের বিমানবাহিনী আক্রমণ চালাচ্ছিল, তখন জন হেমিংওয়ে ছিলেন সেই বীরদের একজন, যাঁরা তাদের জীবন বাজি রেখে আকাশ রক্ষা করেছিলেন।
তিনি চারবার গুলিবিদ্ধ হয়ে বিমান থেকে নামতে বাধ্য হন, কিন্তু প্রতিবারই অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। একবার, মাত্র ৬০০ ফুট উচ্চতা থেকে তিনি যন্ত্রের ত্রুটির কারণে প্যারাশুটে ঝাঁপ দেন। দুর্ভাগ্যবশত, প্যারাশুট ঠিকভাবে খোলেনি। তবে ভাগ্যের পরিহাসে তিনি এক বাগানের গোবরের স্তূপে পড়েন এবং প্রাণে রক্ষা পান।
আরেকবার, তাঁর বিমান উত্তর সাগরে ভেঙে পড়েছিল। তিনি ঠান্ডা জল থেকে উদ্ধার পেতে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেছিলেন। এছাড়া, পিটসি মার্শে দুর্ঘটনার পরেও তিনি জীবনযুদ্ধে জয়ী হন। প্রতিবারই তিনি বলতেন, "আমি বেঁচে গেছি শুধু আইরিশ ভাগ্যের জন্য।"
ব্রিটেনের যুদ্ধ এবং তাঁর ভূমিকা
ব্রিটেনের যুদ্ধ ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯৪০ সালের জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত চলা এই যুদ্ধের সময় ব্রিটেনের আকাশে জার্মান বিমানবাহিনীর প্রতিনিয়ত আক্রমণ প্রতিহত করেছিলেন "দ্য ফিউ" নামে পরিচিত ব্রিটেনের সাহসী পাইলটরা। জন হেমিংওয়ে ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
তাঁর স্কোয়াড্রন, নং ৮৫ স্কোয়াড্রন, প্রথমে দিনে এবং পরে রাতে শত্রুপক্ষের বিমান ধ্বংসে অসাধারণ অবদান রেখেছিল। তাঁদের সাহসিকতা ব্রিটেনকে রক্ষা করেছিল এক ভয়াবহ পরাজয় থেকে।
যুদ্ধের পর জীবন
ব্রিটেনের যুদ্ধে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য জন হেমিংওয়েকে ডিস্টিংগুইশড ফ্লাইং ক্রস (DFC) দিয়ে সম্মানিত করা হয়। যুদ্ধের পর, তিনি ইতালির আকাশে স্পিটফায়ার বিমান নিয়ে শত্রুপক্ষের পিছনে অভিযান চালিয়েছিলেন। ১৯৬৯ সালে তিনি রয়্যাল এয়ার ফোর্স থেকে অবসর নেন।
অবসর গ্রহণের পরও জন হেমিংওয়ে ব্রিটেনের যুদ্ধের ইতিহাসকে জীবন্ত রাখার জন্য কাজ করে গেছেন। তাঁর স্মৃতিচারণ এবং সাক্ষাৎকারে তিনি সবসময় উল্লেখ করতেন যুদ্ধের ভয়াবহতা, পাইলটদের আত্মত্যাগ এবং সাধারণ মানুষের ধৈর্যের কথা।
বিদায়ের মুহূর্তে শূন্যতা
জন হেমিংওয়ের মৃত্যু শুধু ব্রিটেনের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্য একটি বড় শূন্যতা। তিনি ছিলেন সেই সাহসী প্রজন্মের শেষ প্রতিনিধি, যাঁরা নিজেদের জীবন দিয়ে ইতিহাস রচনা করেছিলেন। তাঁর মৃত্যু আমাদের মনে করিয়ে দেয়, কীভাবে ধৈর্য, সাহস আর আত্মত্যাগ এক দেশকে রক্ষা করতে পারে।
তাঁর জীবন আমাদের শেখায়, প্রতিকূলতার মধ্যেও আশার আলো খুঁজে পাওয়া সম্ভব। জন হেমিংওয়ে আমাদের প্রেরণার প্রতীক হয়ে থাকবেন, একটি অসম্ভব সাহসিকতার কাহিনি হয়ে। তাঁর বিদায়ে বিশ্ব আরও একবার মাথা নত করে তাঁকে সম্মান জানায়।