কাশ্মীরের পেহেলগামে রক্তাক্ত সন্ত্রাস: ধর্মের নামে বিভাজন, রাষ্ট্রের ব্যর্থতা
কাশ্মীরের পেহেলগামের এক সন্ত্রাসী হামলায় মৃত্যু হয়েছে বিতান অধিকারী নামে এক তরুণের। শোকের মধ্যেই সমাজে শুরু হয়েছে ধর্মীয় পরিচয় কেন্দ্রিক বিভাজনের আলোচনা। বিতান হিন্দু হওয়ার কারণে তার মৃত্যু ঘিরে ধর্মীয় পরিচয়কে হাতিয়ার করে মিডিয়া এবং রাজনীতি নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির কাজে লিপ্ত। ঠিক একই সময়ে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত স্থানীয় মুসলিম নাগরিক সৈয়দ হুসেন শাহের মৃত্যু যেন উপেক্ষিত। এই দ্বিচারিতা আমাদের রাষ্ট্রের সংবিধান প্রদত্ত সেকুলারিজম ধারণার গভীর সঙ্কটকে প্রকাশ করে।
ধর্ম বনাম রাষ্ট্র: এক চিরস্থায়ী দ্বন্দ্ব
এই ঘটনা প্রমাণ করে, সন্ত্রাসবাদ শুধু প্রাণ কেড়ে নেয় না, বরং সমাজের মধ্যে আরও বিভাজনের বীজ বপন করে। যখন রাষ্ট্রের দায়িত্ব নাগরিকদের সমান নিরাপত্তা প্রদান করা, তখন কেন ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে শোক প্রকাশ করা হয়? সেকুলারিজম কি শুধু কাগজে-কলমেই থাকবে, না কি বাস্তব জীবনে প্রাসঙ্গিক হবে?
রাষ্ট্রের ব্যর্থতা কোথায়?
পুলওয়ামার মতো ঘটনাগুলোর পর সরকার দাবি করেছিল, কাশ্মীরে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৯ সালে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করে সরাসরি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয় কাশ্মীরকে। কিন্তু এরপরও কেন সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসীরা হামলা চালাতে সক্ষম হচ্ছে? প্রশ্ন উঠে আসে, রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার গাফিলতি নিয়ে।
ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ বনাম সেকুলারিজম
ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ সন্ত্রাসবাদের সমাধান হতে পারে না। বরং এটি সমাজে বিভাজন এবং সহিংসতার মাত্রা বাড়ায়। রাষ্ট্র যদি নিরপেক্ষ থাকে, তবেই নাগরিকদের মধ্যে ধর্মের ভিত্তিতে বিভেদ কমে। কিন্তু বর্তমান রাজনীতি এবং মিডিয়া সেকুলারিজমের মূলে আঘাত হেনে সমাজে বিষ ছড়িয়ে দিচ্ছে।
কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর
কাশ্মীরের হিন্দু, মুসলিম, শিখ—সবাই মিলে এই হামলার নিন্দা করেছেন। সহ নাগরিকদের মৃত্যুর শোকে তারা মোমবাতি মিছিল বের করেছেন। কিন্তু তাদের এই মানবিক প্রতিবাদকে মিডিয়া যথাযথভাবে তুলে ধরছে না। কেন এই শান্তিপূর্ণ কণ্ঠস্বর চাপা পড়ে যায়?
উপসংহার
কাশ্মীরের মাটি বারবার আমাদের শেখাচ্ছে, ধর্মের নামে রাজনীতি কখনো সমস্যার সমাধান করে না। সেকুলারিজম দুর্বলতা নয়; বরং একটি নিরাপদ ও সমন্বিত ভারতের জন্য এটি একমাত্র কার্যকরী পথ। এই মুহূর্তে দরকার, নিজেদের ধর্মীয় পরিচয়ের বাইরে গিয়ে নিজেদের একজন মানুষ, একজন ভারতীয় হিসেবে দেখা। বিভাজন নয়, একতাই হোক আমাদের ভবিষ্যৎ।
"আপনার আলোই পারে এই বিভাজনের অন্ধকার দূর করতে।"