ভারত-পাকিস্তান শান্তি আলোচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা সমালোচনার মুখে
কলকাতা, ১২ মে ২০২৫: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর ইস্যুতে তীব্র সংঘর্ষের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। তবে, এই মধ্যস্থতা ভারতের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের নেতৃত্বে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে, যার মাধ্যমে উভয় পক্ষ একটি নিরপেক্ষ স্থানে বিস্তৃত ইস্যুতে আলোচনার জন্য সম্মত হয়েছে।
ভারত সরকার স্পষ্টভাবে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা প্রত্যাখ্যান করেছে, জোর দিয়ে বলেছে যে কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনাই একমাত্র পথ। ভারতের অবস্থান হলো, আলোচনার একমাত্র বিষয় হবে পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীর (পিওকে) ফিরিয়ে আনা। অন্যদিকে, পাকিস্তান মার্কিন মধ্যস্থতাকে স্বাগত জানিয়ে ট্রাম্পের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরপরই লঙ্ঘনের খবর পাওয়া গেছে, যা এই চুক্তির ভঙ্গুরতা প্রকাশ করে। ভারতে সমালোচকরা সরকারের সংঘাত পরিচালনা এবং হঠাৎ যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিরোধী দলের কিছু নেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা এবং তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
আঞ্চলিক প্রভাব
এই যুদ্ধবিরতি দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিস্থিতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। প্রথমত, এটি দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে বড় ধরনের সংঘাতের ঝুঁকি কমিয়েছে, যা স্বল্প মেয়াদে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক। এটি কাশ্মীর, সন্ত্রাসবাদবিরোধী পদক্ষেপ এবং ইন্দু নদী অববাহিকার জলচুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আলোচনার সুযোগ তৈরি করেছে, যা জলসংকট এবং উগ্রবাদের মতো দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
তবে, যুদ্ধবিরতির ভঙ্গুরতা এবং উভয় দেশের মধ্যে গভীর অবিশ্বাস এই অঞ্চলে অস্থিরতার আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে। ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সংগঠন সার্কের কার্যকারিতাকে বাধাগ্রস্ত করছে, যা সংঘাত ব্যবস্থাপনায় কার্যকর ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান এবং মালদ্বীপের মতো প্রতিবেশী দেশগুলো ভারতের আঞ্চলিক প্রভাব এবং চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির কারণে ভূ-রাজনৈতিক চাপের সম্মুখীন হতে পারে।
স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য ধারাবাহিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং সহযোগিতার প্রয়োজন। বাধ্যবাধকতার পরিবর্তে সমঝোতার মাধ্যমে আঞ্চলিক শৃঙ্খলা গড়ে না উঠলে, উত্তেজনা ও অস্থিরতার চক্র অব্যাহত থাকতে পারে।