" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory কারখানা স্থাপন নিয়ে কর্ণাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশের মধ্যে তীব্র সংঘাত Karnataka and Andhra Pradesh Clash Over HAL Factory Relocation //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

কারখানা স্থাপন নিয়ে কর্ণাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশের মধ্যে তীব্র সংঘাত Karnataka and Andhra Pradesh Clash Over HAL Factory Relocation

 

কারখানা স্থাপন নিয়ে কর্ণাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশের মধ্যে তীব্র সংঘাত



দেশের প্রতিরক্ষা শিল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (HAL)-এর কারখানা স্থানান্তর ও সম্প্রসারণ নিয়ে কর্ণাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এই দ্বন্দ্ব কেবল শিল্প স্থাপনের বিষয় নয়, বরং রাজ্যগুলোর অর্থনৈতিক গর্ব, রাজনৈতিক প্রভাব এবং ফেডারেল সম্পর্কের প্রশ্নকে কেন্দ্র করে জটিলতর হয়ে উঠছে।

 

সংঘাতের পটভূমি

ভারতের প্রতিরক্ষা খাতে HAL একটি প্রধান নাম। ১৯৪০ সাল থেকে বেঙ্গালুরুতে সদর দফতর অবস্থিত এই সংস্থা দেশের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরি করে। বর্তমানে, HAL-এর অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট (AMCA) এবং লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফট (LCA) উৎপাদন ইউনিট বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত। এই ইউনিটগুলো কর্ণাটকের শিল্প খাতের মেরুদণ্ড এবং রাজ্যের অর্থনীতির একটি বড় অংশ এর উপর নির্ভরশীল।

কিন্তু সম্প্রতি, অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন. চন্দ্রবাবু নাইডু একটি প্রস্তাব দিয়েছেন, যাতে এই ইউনিটগুলো বেঙ্গালুরু থেকে অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুর জেলার লেপাক্ষী-মাদাকসিরা অঞ্চলে স্থানান্তর করা হয়, অথবা সেখানে নতুন কারখানা স্থাপন করা হয়। তিনি এই উদ্দেশ্যে ১০,০০০ একর জমি বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যুক্তি দেখিয়ে যে বেঙ্গালুরুতে জমির সংকটের কারণে ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ সম্ভব নয়। এই প্রস্তাবের ফলে দুই রাজ্যের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।


অন্ধ্রপ্রদেশের অবস্থান


চন্দ্রবাবু নাইডু তাঁর প্রস্তাবে জোর দিয়েছেন যে, HAL-এর কারখানা অন্ধ্রপ্রদেশে স্থানান্তর বা নতুন ইউনিট স্থাপন রাজ্যের প্রতিরক্ষা শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেছেন, “অন্ধ্রপ্রদেশে প্রচুর জমি, অবকাঠামো এবং শিল্প বিকাশের সম্ভাবনা রয়েছে। এই কারখানা রাজ্যে স্থাপিত হলে হাজার হাজার তরুণের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে এবং অন্ধ্রপ্রদেশ প্রতিরক্ষা শিল্পের একটি নতুন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে।”

নাইডু আরও উল্লেখ করেছেন যে, লেপাক্ষী-মাদাকসিরা অঞ্চল বেঙ্গালুরুর কাছাকাছি অবস্থিত, যা পরিবহন এবং সংযোগের দিক থেকে সুবিধাজনক। তিনি এটাও তুলে ধরেছেন যে, অন্ধ্রপ্রদেশ জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (NDA)-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ শরিক, এবং কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত রাজ্যের উন্নয়নের জন্য এই প্রস্তাব বিবেচনা করা।


কর্ণাটকের তীব্র প্রতিবাদ


কর্ণাটক সরকার এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছে। রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী এমবি পাটিল এটিকে ‘অপ্রাসঙ্গিক’ এবং ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, “HAL কর্ণাটকের শিল্প ঐতিহ্য এবং অর্থনীতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বেঙ্গালুরুতে এইচএএল-এর সদর দফতর এবং উৎপাদন ইউনিটগুলো এই রাজ্যের প্রতিরক্ষা শিল্পের মূল ভিত্তি। এগুলো স্থানান্তর করার কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না।”

কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমারও একইভাবে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন। সিদ্দারামাইয়া বলেছেন, “কর্ণাটক ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্পে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। HAL-এর কারখানা এখানে থাকবে এবং এর সম্প্রসারণও এখানেই হবে।” তারা আরও দাবি করেছেন যে, কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত কর্ণাটকের অবদানকে সম্মান জানানো এবং রাজ্যে একটি প্রতিরক্ষা শিল্প করিডর স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া।

কর্ণাটকের মন্ত্রীরা এটাও প্রশ্ন তুলেছেন যে, উত্তর প্রদেশ এবং তামিলনাড়ুতে প্রতিরক্ষা শিল্প করিডর দেওয়া হলেও কর্ণাটক কেন এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তারা মনে করেন, এইচএএল-এর কারখানা স্থানান্তরের প্রস্তাব কর্ণাটকের সঙ্গে অন্যায়।


কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা


প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে HAL-এর বিদ্যমান কারখানা স্থানান্তরের কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে ভবিষ্যতে নতুন প্রকল্প বা সম্প্রসারণের জন্য অন্ধ্রপ্রদেশে কারখানা স্থাপনের বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকার এই বিষয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখেছে, কিন্তু দুই রাজ্যের রাজনৈতিক চাপের মুখে সিদ্ধান্ত নেওয়া জটিল হয়ে পড়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশের NDA-তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং কর্ণাটকের শিল্প কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত অবস্থান এই সংঘাতকে আরও জটিল করে তুলেছে।


সংঘাতের মূল কারণগুলি

  1. কারখানা স্থানান্তর বনাম সম্প্রসারণ: অন্ধ্রপ্রদেশ বেঙ্গালুরুর জমি সংকটের কথা উল্লেখ করে HAL-এর ইউনিট স্থানান্তর বা নতুন কারখানা স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে। কর্ণাটক এই স্থানান্তরের বিরোধিতা করে বিদ্যমান ইউনিট ধরে রাখতে চায়।
  2. অর্থনৈতিক ও শিল্প গর্ব: HAL কর্ণাটকের অর্থনীতির একটি প্রধান স্তম্ভ। রাজ্য এটিকে তাদের শিল্প ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে দেখে। অন্যদিকে, অন্ধ্রপ্রদেশ নতুন শিল্প কেন্দ্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।
  3. ফেডারেল সম্পর্ক: কর্ণাটক মনে করে, অন্ধ্রপ্রদেশের প্রস্তাব ফেডারেল সহযোগিতার নীতির পরিপন্থী। তারা বলছে, নতুন কারখানা অন্যত্র হতে পারে, কিন্তু বিদ্যমান কারখানা স্থানান্তর অগ্রহণযোগ্য।
  4. প্রতিরক্ষা করিডরের দাবি: কর্ণাটক প্রশ্ন তুলেছে, কেন তারা প্রতিরক্ষা শিল্প করিডর থেকে বঞ্চিত। তারা এই সুবিধা দাবি করছে।
  5. রাজনৈতিক প্রভাব: অন্ধ্রপ্রদেশ NDA-র শরিক হিসেবে কেন্দ্রের উপর চাপ সৃষ্টি করছে, যখন কর্ণাটক তাদের শিল্প নেতৃত্ব ধরে রাখতে মন্ত্রী ও সাংসদদের মাধ্যমে লবিং করছে।


সম্ভাব্য প্রভাব

এই সংঘাত শুধু দুই রাজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্পের ভবিষ্যৎ এবং ফেডারেল কাঠামোর উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। যদি কেন্দ্র অন্ধ্রপ্রদেশের প্রস্তাব গ্রহণ করে, তবে কর্ণাটকের অর্থনীতি এবং শিল্প খাতে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। অন্যদিকে, অন্ধ্রপ্রদেশে নতুন কারখানা স্থাপন হলে রাজ্যটি শিল্প ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বড় লাভবান হবে। তবে, এই সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য একটি রাজনৈতিক ও কৌশলগত চ্যালেঞ্জ।


কারখানা স্থাপন নিয়ে কর্ণাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশের মধ্যে এই সংঘাত ভবিষ্যতে আরও তীব্র হতে পারে। দুই রাজ্যই নিজেদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় জোরালো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নিরপেক্ষ অবস্থান এই মুহূর্তে পরিস্থিতি শান্ত রাখলেও, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় একটি রাজ্যের পক্ষে এবং অন্যটির বিপক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ঘটনা ভারতের ফেডারেল কাঠামো এবং শিল্প বিকাশের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির হয়ে থাকতে পারে।

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies