মে দিবস: শ্রমিক আন্দোলনে নারী কর্মীদের ভূমিকা এবং তাঁদের দাবি
মে দিবসের ইতিহাস কেবল শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার সংগ্রামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি নারীদের সাহসী লড়াইয়ের সঙ্গেও গভীরভাবে যুক্ত। শ্রমিক আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা এবং তাঁদের দাবি শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়।
নারী শ্রমিকদের প্রাথমিক সংগ্রাম
১৮৫৭ সালে নিউ ইয়র্কের গার্মেন্ট কর্মী নারীরা বেতন বৃদ্ধি, কর্মঘণ্টা হ্রাস, এবং কাজের পরিবেশের উন্নতির দাবিতে এক সাহসী আন্দোলনে নেমেছিলেন। এই আন্দোলনই পরে মে দিবস উদযাপনের প্রেক্ষাপট তৈরি করে। ১৯০৮ সালে আবারও গার্মেন্ট কর্মী নারীরা রাস্তায় নেমে আসে। তাঁরা কাজের ক্ষেত্রে সুরক্ষা, ভোটাধিকার, এবং শিশুশ্রমের অবসানের মতো গুরুত্বপূর্ণ দাবি উত্থাপন করেন।
নারী নেতৃত্বে শ্রমিক আন্দোলন
১৯০৯ সালের শার্টওয়েস্ট মেকারদের ধর্মঘট, যা "আপরাইজ অফ দ্য ২০,০০০" নামে পরিচিত, শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এই ধর্মঘটটি মূলত নারী নেতৃত্বাধীন ছিল এবং এতে অংশগ্রহণকারী নারী শ্রমিকরা কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। এর মাধ্যমে শ্রমিক আন্দোলনে নারীদের শক্তিশালী অবস্থান প্রতিষ্ঠিত হয়।
আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলনে নারীদের অবদান
জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের মতো নারী নেত্রীরা মে দিবসের মাধ্যমে নারীর অধিকার এবং সমান সুযোগের দাবিকে জোরালো করেন। তাঁরা শ্রমিক অধিকার এবং নারী অধিকারকে একত্রিত করে আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করেন।
নারী শ্রমিকদের প্রধান দাবি
নারী শ্রমিকদের দাবি ছিল স্পষ্ট এবং দৃঢ়:
- কর্মঘণ্টা হ্রাস: ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টার পরিবর্তে ৮ ঘণ্টার কর্মদিবস।
- ন্যায্য মজুরি: নারী শ্রমিকরা সমান কাজের জন্য সমান বেতনের দাবি তোলেন।
- কাজের পরিবেশের উন্নতি: কারখানার বিপজ্জনক এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ পরিবর্তনের দাবি।
- ভোটাধিকার: সামাজিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভোটাধিকার অর্জন।
- শিশুশ্রমের অবসান: শিশুশ্রম বন্ধের মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা।
আধুনিক মে দিবস উদযাপনে নারীদের ভূমিকা
আজকের মে দিবস উদযাপনেও নারী শ্রমিকদের অবদান স্মরণ করা হয়। তাঁদের সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে এই দিনটি কেবল পুরুষ শ্রমিকদের নয়, বরং নারীদের অধিকার এবং সমান সুযোগের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
উপসংহার
নারী শ্রমিকদের আন্দোলন এবং তাঁদের অবদান ছাড়া মে দিবসের ইতিহাস অসম্পূর্ণ। তাঁদের সাহসিকতা এবং দাবিগুলো শ্রমিক আন্দোলনের গতিপথকে বদলে দিয়েছে। নারী কর্মীদের এই লড়াই আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে সমান অধিকার এবং ন্যায্যতা অর্জনের জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ।