শেনঝৌ ১৯: দীর্ঘ মহাকাশ যাত্রা শেষে ঘরে ফেরা - স্বস্তি আর আবেগের মিশ্রণ
বেইজিং, ৩ মে, ২০২৫ - ছয় মাস ধরে মহাকাশের বিশাল শূন্যতায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করার পর, শেনঝৌ ১৯ মিশনের তিন নভোচারী অবশেষে তাদের প্রিয়জনের কাছে ফিরে এসেছেন। আজ বিকেলে, ইনার মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ডংফেং ল্যান্ডিং সাইটে শেনঝৌ ১৯-এর রিএন্ট্রি ক্যাপসুল অবতরণ করার সাথে সাথেই যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল গোটা দেশ। মিশন কমান্ডার সিনিয়র কর্নেল কাই জুঝে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সং লিংডং এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল ওয়াং হাওজে, যারা এই দীর্ঘ যাত্রায় অসীম ধৈর্য আর সাহসের পরিচয় দিয়েছেন, তারা এখন আবার পৃথিবীর বুকে।
নয় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা এই প্রত্যাবর্তন যাত্রা ছিল একই সাথে উত্তেজনা আর আবেগে ভরা। মহাকাশ স্টেশনে থাকাকালীন, তারা শুধু কিছু বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালাননি, বরং মানবজাতির মহাকাশ জয়ের স্বপ্নকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছেন। মঙ্গলবার অবতরণের কথা থাকলেও, ডংফেং ল্যান্ডিং সাইটের প্রতিকূল আবহাওয়া অবতরণ প্রক্রিয়াটিকে একদিনের জন্য পিছিয়ে দেয়। এই অপ্রত্যাশিত বিলম্ব অবশ্য তাদের পরিবার এবং দেশবাসীর উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছিল। অবশেষে, যখন ক্যাপসুলটি নিরাপদে অবতরণ করলো, তখন যেন সবার বুকের ভেতর থেকে একটা বিশাল পাথর নেমে গেল।
ল্যান্ডিং সাইটে উপস্থিত উদ্ধারকারী দল দ্রুত ক্যাপসুলটিকে ঘিরে ফেলে। সাদা আর কমলা রঙের বিশেষ পোশাকে সজ্জিত কর্মীরা ক্যাপসুলের কাছে ছুটে যান, যেন তারা তাদের হারানো সন্তানদের ফিরে পেয়েছেন। ক্যাপসুলের দরজা খোলার পর, তিন নভোচারীকে ধীরে ধীরে বাইরে আনা হয়। তাদের ক্লান্ত মুখগুলোতেও ছিল এক তৃপ্তির হাসি। এই হাসি ছিল ছয় মাসের দীর্ঘ পরিশ্রম, অসীম ধৈর্য, আর অদম্য সাহসের প্রতীক।
কাই জুঝে, যিনি এই মিশনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, অবতরণের পর বলেন, "পৃথিবী থেকে এত দূরে থেকেও, আমরা সবসময় আমাদের মাতৃভূমি আর দেশের মানুষের কথা মনে রেখেছি। এই নীল গ্রহটিই আমাদের সবার ঘর, আর একে রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।" তার কণ্ঠে ছিল গভীর আবেগ আর দেশপ্রেমের সুর। সং লিংডং, যিনি এই মিশনে প্রথমবার মহাকাশে গিয়েছিলেন, জানান, "মহাকাশে উড়ে যাওয়াটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন। আর এখন, নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পেরে আমি কৃতজ্ঞ। আমার পরিবার, আমার বন্ধু, আর সেই সব মানুষদের আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই, যারা দিনরাত আমাদের জন্য প্রার্থনা করেছেন।" ওয়াং হাওজে, যিনি চীনের প্রথম মহিলা মহাকাশ ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার, বলেন, "মহাকাশে কাজ করাটা ছিল একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। কিন্তু আমরা সবসময় একসাথে থেকেছি, একে অপরের মনোবল জুগিয়েছি। এই মিশনের প্রতিটি মুহূর্ত আমার মনে গেঁথে থাকবে।"
এই মিশনটি চীনের মহাকাশ কর্মসূচিতে একটি নতুন পালক যোগ করলো। দীর্ঘ সময় ধরে মহাকাশে মানুষের উপস্থিতি এবং বিভিন্ন জটিল পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর ক্ষেত্রে চীন যে কতটা সক্ষম, তা এই মিশনের মাধ্যমে আরও একবার প্রমাণিত হলো। নভোচারীদের এই নিরাপদ প্রত্যাবর্তন শুধু তাদের পরিবার নয়, গোটা দেশের জন্য আনন্দ আর গর্বের মুহূর্ত। এই মিশন থেকে প্রাপ্ত ডেটা এবং অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে চীনের মহাকাশ স্টেশন এবং চন্দ্র অভিযানসহ আরও দূরবর্তী মহাকাশ যাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।