" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory গোয়ার লাইরাই জাত্রায় ভিড়ের ধাক্কায় ৭ জনের মৃত্যু, Tragedy at Goa's Lairai Jatra: 7 Killed, Over 30 Injured in Stampede Amid Historic Festival //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

গোয়ার লাইরাই জাত্রায় ভিড়ের ধাক্কায় ৭ জনের মৃত্যু, Tragedy at Goa's Lairai Jatra: 7 Killed, Over 30 Injured in Stampede Amid Historic Festival

 গোয়ার লাইরাই জাত্রায় ভিড়ের ধাক্কায় ৭ জনের মৃত্যু, আহত ৩০-এর বেশি: একটি ঐতিহাসিক উৎসবের দুঃখজনক পরিণতি



শিরগাঁও, গোয়া, ৩ মে ২০২৫: গোয়ার শিরগাঁও গ্রামে শ্রী লাইরাই দেবী মন্দিরে শনিবার ভোরে শ্রী লাইরাই জাত্রা উৎসব চলাকালীন ভয়াবহ ভিড়ের ধাক্কায় ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৩০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এই দুর্ঘটনা লাইরাই জাত্রার মতো একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ উৎসবের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
লাইরাই জাত্রার ইতিহাস ও তাৎপর্য

লাইরাই জাত্রা গোয়ার শিরগাঁও গ্রামে শতাব্দীপ্রাচীন একটি ধর্মীয় উৎসব, যা দেবী লাইরাইকে উৎসর্গ করা হয়। দেবী লাইরাইকে দেবী পার্বতীর একটি রূপ বলে মনে করা হয় এবং তিনি গোয়া ও কোঙ্কন অঞ্চলের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর রক্ষাকর্ত্রী হিসেবে পূজিত হন। স্থানীয় কিংবদন্তি অনুসারে, দেবী লাইরাইকে মায়েমের মহামায়া, মুলগাঁওয়ের কেলবাই, মোর্জিমের মোর্জাই, মাপুসার মিলাগ্রেসের আওয়ার লেডি (মিরাবাই), মায়েমের শীতলাই এবং আঞ্জাদিব দ্বীপের আজাদিপার বোন বলা হয়। একটি পৌরাণিক কাহিনীতে বলা হয়, শিরগাঁও গ্রামে অশুভ শক্তি বা রাক্ষসরা দেবী লাইরাইকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করে এবং ব্যর্থ হয়ে গ্রামে আগুন লাগিয়ে দেয়। দেবী তাঁর ভক্তদের (ধোঁদ) সংগঠিত করে আগুন নিভিয়ে গ্রামকে রক্ষা করেন। এই ঘটনার স্মরণে লাইরাই জাত্রায় আগুনের উপর দিয়ে খালি পায়ে হাঁটার রীতি প্রচলিত হয়েছে।
এই উৎসব প্রাচীনকাল থেকে পালিত হয়ে আসছে, এমনকি পর্তুগিজ শাসনকালে (১৫১০-১৯৬১) যখন হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠানের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। ১৯৬১ সালে গোয়া ভারতের অংশ হওয়ার পর এই জাত্রা আরও ব্যাপকভাবে পালিত হতে শুরু করে। সাধারণত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত এই উৎসবে গোয়া, মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটক থেকে হাজার হাজার ভক্ত সমবেত হন। উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হলো ধোঁদাচি জাত্রা, যেখানে ভক্তরা কঠোর উপবাস ও শুদ্ধতার নিয়ম পালন করে আগুনের উপর দিয়ে খালি পায়ে হাঁটেন। এছাড়া পবিত্র স্নান, হোমকুন্ড নৃত্য এবং কালশ যাত্রার মতো আচার-অনুষ্ঠান এই উৎসবকে বিশেষ করে তোলে।
দুঃখজনক দুর্ঘটনা

২০২৫ সালের ৩ মে ভোরে শ্রী লাইরাই জাত্রা চলাকালীন মন্দির প্রাঙ্গণে হঠাৎ ভিড়ের হুড়োহুড়ি শুরু হয়, যা দ্রুত ভিড়ের ধাক্কায় রূপ নেয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সংকীর্ণ প্রস্থান পথ এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণে অপর্যাপ্ত ব্যবস্থার কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এই ঘটনায় ৭ জনের মৃত্যু হয় এবং ৩০ জনের বেশি আহত হন। আহতদের দ্রুত গোয়া মেডিকেল কলেজ (জিএমসি) এবং মাপুসার নর্থ গোয়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নর্থ গোয়ার পুলিশ সুপার অক্ষত কৌশল জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত চলছে এবং ভিড়ের ধাক্কার সঠিক কারণ এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত ভিড়, পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব এবং জরুরি প্রস্থান পথের ঘাটতি এই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হতে পারে।


সরকারি প্রতিক্রিয়া ও শোক প্রকাশ

গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত ঘটনাস্থল ও হাসপাতাল পরিদর্শন করে আহতদের সুচিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “এটি একটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আছি এবং দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক্স-এ শোক প্রকাশ করে বলেন, “শিরগাঁওয়ে ভিড়ের ধাক্কায় প্রাণহানির ঘটনায় আমি গভীরভাবে মর্মাহত। যারা প্রিয়জন হারিয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনা জানাই। আহতরা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন, সেই প্রার্থনা করি।” রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও শোকবার্তায় বলেন, “এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় আমি গভীরভাবে শোকাহত। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।”
ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা

লাইরাই জাত্রা গোয়ার কোঙ্কন সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, গোয়া, মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটকের মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রতীক। তবে এই দুর্ঘটনা ভারতের ধর্মীয় উৎসবগুলোতে ভিড় নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তার গুরুত্ব তুলে ধরেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতে এই ধরনের উৎসবে আধুনিক ভিড় ব্যবস্থাপনা, পর্যাপ্ত অবকাঠামো এবং জরুরি প্রস্থান পথের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি।
লাইরাই জাত্রার মতো একটি ঐতিহাসিক উৎসব যেন ভবিষ্যতে আনন্দ ও ভক্তির প্রতীক হয়ে থাকে, তার জন্য প্রশাসন ও সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies