মার্কিন মধ্যস্থতায় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি: ঐতিহাসিক নীতি থেকে সরে আসার অভিযোগ
কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাতের পর গত শনিবার একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সম্ভব হয়েছে। এই সমঝোতা দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে কয়েক দিনের তীব্র সংঘর্ষের অবসান ঘটালেও, এটি ভারতের ঐতিহাসিক অ-জোট নীতি এবং দ্বিপাক্ষিক সমাধানের নীতি থেকে সরে আসা হিসেবে সমালোচিত হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর নেতৃত্বে এই মধ্যস্থতা হয়। গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং উভয় দেশের শীর্ষ সামরিক ও কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কাশ্মীর সীমান্তে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে, যা এই চুক্তির স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
এই যুদ্ধবিরতির পটভূমিতে পাহালগামে একটি সন্ত্রাসী হামলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গত এপ্রিলে ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পাহালগামে ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ‘অপারেশন সিন্দুর’ শুরু করে, যার মাধ্যমে পাকিস্তান ও পাক-শাসিত কাশ্মীরে নয়টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়। এটি ২০১৯ সালের পর দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংঘর্ষ হিসেবে বিবেচিত হয়।
১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তি অনুযায়ী, ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণ রেখা প্রতিষ্ঠা করে এবং দ্বিপাক্ষিকভাবে সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেয়। এই চুক্তি তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে একটি ঢাল হিসেবে কাজ করেছে। কিন্তু মার্কিন মধ্যস্থতায় এই যুদ্ধবিরতি ভারতের এই দীর্ঘদিনের নীতি থেকে সরে আসা হিসেবে দেখা হচ্ছে। জওহরলাল নেহরুর আমলে প্রতিষ্ঠিত অ-জোট নীতি ভারতকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে একটি স্বাধীন কণ্ঠস্বর দিয়েছিল, যা এখন প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ঘটনা ভারতের কূটনৈতিক স্বাধীনতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী উত্তেজনা সমাধানে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। পারমাণবিক অস্ত্রের উপস্থিতি এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। যুদ্ধবিরতি স্বল্পমেয়াদে সংঘাত কমালেও, কাশ্মীর ইস্যুর মূল সমস্যা অমীমাংসিত থাকায় ভবিষ্যতে আরও সংঘর্ষের আশঙ্কা থেকে যায়।