শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলা: অর্ধনগ্ন মহামিছিলের ডাক, কড়া পুলিশি নজরদারি
কলকাতা, ৩০ মে:
শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত অর্ধনগ্ন অবস্থায় মহামিছিলের ডাক দিয়েছেন চাকরিচ্যুত শিক্ষক-শিক্ষিকারা। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরও রাজ্য সরকার কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ায় এবং মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক মন্তব্য ঘিরে আন্দোলন আরও তীব্র হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কলকাতা পুলিশ পুরোপুরি সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে।
শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরে সকাল থেকেই মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। যাঁরা মিছিলে যোগ দিতে বা প্রস্তুতি নিতে এসেছেন, তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করা হচ্ছে। পুলিশের যুক্তি, এই ধরনের অর্ধনগ্ন মিছিল এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করতে পারে, তাই মিছিলের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তারা আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত। শহরের গুরুত্বপূর্ণ অংশে যান চলাচলে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
প্রতিবাদকারীদের দাবি, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর রাজ্য সরকার কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তাঁরা বলছেন, আদালতের নির্দেশকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, এবং মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্য তাঁদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। তাই তাঁরা রাস্তায় নেমে নিজেদের দাবি আদায়ের জন্য চূড়ান্ত আন্দোলনের পথে হাঁটছেন। শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানিয়েছেন, দাবি না মানা পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন চলবে।
কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এই ঘটনা?
১. শিক্ষার মানে ধাক্কা: হঠাৎ করে এত বিপুল সংখ্যক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের ফলে স্কুলগুলিতে শিক্ষক সংকট তৈরি হয়েছে। এতে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার ধারাবাহিকতা ব্যাহত হচ্ছে। ক্লাসে শিক্ষকের অভাবে পড়াশোনার মান নেমে যাচ্ছে, যা রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য বড় হুমকি।
২. অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব: চাকরি হারানো শিক্ষকদের পরিবারগুলি আর্থিক অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। সরকারি চাকরির স্থায়িত্ব ছিল তাদের জীবনের ভিত্তি, যা হারিয়ে যাওয়ায় হতাশা ও ক্ষোভ বাড়ছে। এই ঘটনা সমাজের বৃহত্তর অংশে অস্থিরতা ছড়াচ্ছে।
৩. শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হ্রাস: নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও স্বচ্ছতার অভাবের অভিযোগে চাকরি বাতিল হওয়ায় শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হচ্ছে। এমনকি যোগ্য শিক্ষকরাও এই বাতিলের শিকার হয়েছেন, যা ন্যায়বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
৪. রাজনৈতিক উত্তেজনা: এই ঘটনা রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। শিক্ষক, ছাত্র ও অভিভাবকদের ক্ষোভ রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। পুলিশ ও প্রতিবাদকারীদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। প্রতিবাদ ও আন্দোলনের মাধ্যমে এই বিষয়টি জনমনে বড় আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।
সরকার ও সমাধানের পথ
শিক্ষকদের দাবি, তাদের চাকরি দ্রুত পুনর্বহাল করা হোক এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হোক। এই সংকট সমাধানে রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে। শান্তিপূর্ণ ও সমাধানমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে শিক্ষকদের পুনর্বহাল এবং শিক্ষা ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এখন অত্যন্ত জরুরি।
সার্বিক চিত্র
রাজ্যজুড়ে শিক্ষক চাকরিচ্যুতির ইস্যুতে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরও সমস্যার সমাধান না হওয়ায় আন্দোলন আরও বিস্তৃত হচ্ছে। প্রশাসন ও প্রতিবাদকারীদের মধ্যে এই সংঘাতের দিকে নজর রাখছে গোটা রাজ্য। এই সংকটের সমাধান না হলে দীর্ঘমেয়াদে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।