ভারতের ছাত্র ফেডারেশন (এসএফআই) সম্প্রতি ১৮তম সর্বভারতীয় সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। দক্ষিণ ভারতের কেরালার কোঝিকোড়ে আয়োজিত এই সম্মেলন ভারতের ছাত্র আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ছাত্রনেতা, প্রতিনিধি ও সদস্যদের মিলনমেলা এই সম্মেলনে শিক্ষাক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জ এবং ছাত্রদের ন্যায্য অধিকারের জন্য লড়াইয়ের নতুন রূপরেখা তৈরি করা হয়।
সম্মেলনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক কমরেড সৃজন ভট্টাচার্য এবং সভাপতি কমরেড আদার্স এম সাজি। তাদের নেতৃত্বে এসএফআই নতুন উদ্যমে কাজ করার সংকল্প নিয়েছে।
নেতৃত্বের পরিচিতি ও অভিজ্ঞতা
কমরেড সৃজন ভট্টাচার্য দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। পশ্চিমবঙ্গের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়নের পুনঃপ্রতিষ্ঠায় তার নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষার অধিকার ও অসাম্প্রদায়িকতার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান এবং মাঠে সক্রিয় অংশগ্রহণ তাকে এসএফআই-এর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে।
অন্যদিকে, কমরেড আদার্স এম সাজি দক্ষিণ ভারতের ছাত্র আন্দোলনে অন্যতম পরিচিত নাম। কেরালা থেকে উঠে আসা এই ছাত্রনেতা সামাজিক ও শিক্ষাক্ষেত্রের বিভিন্ন ইস্যুতে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার জন্য সুপরিচিত। তিনি ছাত্র সমাজের মধ্যে প্রগতিশীল মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে আসছেন।
সম্মেলনের আলোচনা ও প্রস্তাবনা
সম্মেলনে শিক্ষার অধিকার, অসাম্প্রদায়িকতা, এবং জাতি, ধর্ম বা শ্রেণী নির্বিশেষে সকলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার মতো বিষয়গুলো বিশেষ গুরুত্ব পায়। এছাড়াও, শিক্ষার বেসরকারিকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা, সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নতি, এবং কর্মসংস্থানের দাবি নিয়ে আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করা হয়।
সম্মেলনে ছাত্র সমাজকে সংগঠিত করে তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যুগুলোর সঙ্গে যুক্ত করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। শ্রমিক ও কৃষকের অধিকারের জন্য লড়াইয়ে ছাত্রদের ভূমিকা এবং সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্যও প্রস্তাব গৃহীত হয়।
নতুন নেতৃত্বের প্রত্যয়
নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, "আজকের দিনটি ভারতের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ছাত্রদের অধিকার এবং শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা আমাদের সংগ্রাম আরও জোরদার করব।"
সভাপতি আদার্স এম সাজি জানান, "আমাদের লক্ষ্য শুধু শিক্ষাক্ষেত্রেই নয়, বরং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে ছাত্রদের অবদানকে আরও শক্তিশালী করা। আমরা বেকারত্ব, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব।"
সম্মেলনের তাৎপর্য
এসএফআই-এর এই সম্মেলন শুধু নেতৃত্বের পরিবর্তন নয়, বরং সংগঠনের ভবিষ্যৎ দিশার নির্ধারণ করেছে। ছাত্রদের শিক্ষা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলনে এসএফআই তার ঐতিহ্যবাহী সংগ্রামের ধারা অব্যাহত রাখবে।
সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত এবং প্রস্তাবনা ভারতীয় ছাত্র সমাজের জন্য একটি নতুন দিশা দেবে। নবনির্বাচিত নেতৃত্বের মাধ্যমে এসএফআই প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক এবং অসাম্প্রদায়িক শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে কাজ করবে।