কলকাতা, ১৬ জুলাই, ২০২৫: পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি বর্তমানে এক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন। রাজ্য সরকারের জনকল্যাণমূলক প্রকল্প, বিশেষত 'লক্ষ্মীর ভান্ডার' প্রকল্পে ব্যাপক ব্যয় এবং ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা রাজ্যের আর্থিক স্থিতিশীলতাকে ক্রমশ চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের সুবিধাভোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থও বাড়ছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, এই ধরনের প্রকল্পে বিনিয়োগের কোনো প্রত্যক্ষ প্রতিদান না থাকায় তা রাজ্যের অর্থনীতিতে গুরুতর চাপ সৃষ্টি করছে।
এদিকে, রাজ্য সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণও আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। শুধুমাত্র জুন মাসেই রাজ্য সরকার রেকর্ড পরিমাণ ৭,৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যা গত ১৪ বছরের মধ্যে এক মাসে সর্বোচ্চ ঋণ গ্রহণের রেকর্ড। এই ঋণের একটি বড় অংশ ব্যয় হচ্ছে আবাসন প্রকল্প 'বাংলার বাড়ি'-র মতো স্কিমগুলিতে।
আর্থিক সংকট মোকাবিলায় রাজ্য সরকার বিভিন্ন বিভাগে ব্যয় সংকোচনের পথে হাঁটছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
বিভিন্ন বিভাগের প্রকল্প অনুমোদনের ঊর্ধ্বসীমা কমানো। যেমন, পূর্ত, সেচ, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ এবং নগর উন্নয়ন বিভাগের জন্য এই সীমা ৫ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৩ কোটি টাকা করা হয়েছে।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন, সুন্দরবন উন্নয়ন এবং পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিভাগের জন্য এই সীমা ৩ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ১ কোটি টাকা করা হয়েছে।
আবাসন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ এবং তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের জন্য ঊর্ধ্বসীমা ৭৫ লক্ষ টাকা এবং অন্যান্য বিভাগের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়াও, নতুন সরকারি নিয়োগে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। বিভাগগুলিকে তাদের অনুমোদিত শূন্যপদের সর্বোচ্চ ৫০% পূরণ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এই আর্থিক সীমাবদ্ধতাগুলি রাজ্যে নতুন প্রকল্প, পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং বড় ধরনের সংস্কার কাজকে বাধাগ্রস্ত করছে। এমনকি, শিল্পে বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য পূর্বে দেওয়া বিভিন্ন প্রণোদনা ও ছাড় রাজ্য সরকার প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, সামাজিক কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির ধারাবাহিকতা ও শক্তি বজায় রাখা।
লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরের জন্য প্রাথমিকভাবে ১৪,৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও, ২০২৫-২৬ আর্থিক বছরের জন্য অতিরিক্ত ১২,৩০০ কোটি টাকা যুক্ত করা হয়েছে, যার ফলে মোট বরাদ্দ দাঁড়িয়েছে ২৬,৭০০ কোটি টাকা।
রাজ্যের মোট ঋণ তার রাজ্য মোট দেশজ উৎপাদনের (GSDP) প্রায় ৩৮%। এই বছর ঋণের পরিমাণ প্রায় ৭.৭১ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে, যার মধ্যে ৮১,৫১০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে সামাজিক কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি গুরুত্বপূর্ণ হলেও, বর্তমান পদ্ধতিটি অস্থিতিশীল এবং পশ্চিমবঙ্গের সামগ্রিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এছাড়াও, একটি উদ্বেগ রয়েছে যে অনেক অযোগ্য ব্যক্তিও এই সুবিধাগুলি গ্রহণ করছেন এবং নিয়মিত যাচাইকরণের অভাব রয়েছে।