গোপালগঞ্জ, ১৬ জুলাই ২০২৫: ন্যাশনাল কনজারভেটিভ পার্টি (এনসিপি)-র সমাবেশ ঘিরে আজ গোপালগঞ্জ শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এনসিপি নেতাদের ওপর ভয়াবহ হামলা চালানো হয়েছে, যাতে দুজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন গোপালগঞ্জ জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে।
গোপালগঞ্জে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিস্থল সংলগ্ন এলাকায় এনসিপি একটি সমাবেশের আয়োজন করেছিল। এনসিপি-র পক্ষ থেকে পূর্বে ঘোষণা করা হয়েছিল যে তারা শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিস্থল "ধ্বংস" করবে, যা স্থানীয় সাধারণ জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে। এই ঘোষণার প্রতিবাদে গোটা শহর একজোট হয়েছিল।
জানা গেছে, আজ (বুধবার) দুপুরে গোপালগঞ্জ পৌর পার্কে এনসিপি তাদের 'দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা' কর্মসূচির অংশ হিসেবে একটি সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশ শুরুর আগেই প্রায় ২০০-৩০০ স্থানীয় ব্যক্তি লাঠিসোঁটা নিয়ে সমাবেশস্থলে হামলা চালায়। হামলাকারীরা মঞ্চের চেয়ার ভাঙচুর করে এবং ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলাকারীরা সবাই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের সমর্থক।
হামলা-ভাঙচুর ও বাধার মুখেও এনসিপি সমাবেশ চালিয়ে যায়। সমাবেশে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। তবে সমাবেশ শেষে এনসিপি নেতারা গাড়িতে করে সমাবেশস্থল ত্যাগ করার সময় আবারও তাদের গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়। গাড়িবহর লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়া হয় এবং বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
হামলাকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও সেনাসদস্যরা সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। হামলাকারীরা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গাড়ি লক্ষ্য করেও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এই সংঘর্ষে দুইজনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহতরা হলেন গোপালগঞ্জ শহরের উদয়ন রোডের বাসিন্দা দীপ্ত সাহা (২৫) ও কোটালীপাড়ার রমজান কাজী (১৮)। হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, তাদেরকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। এছাড়াও ৯ জন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এনসিপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এই হামলা চালিয়েছে এবং পুলিশ-সেনাবাহিনী নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। হামলার মুখে বিকেল ৪টার দিকে এনসিপি নেতারা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আশ্রয় নেন। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতায় বিকেল ৫টার পর এনসিপি নেতারা গোপালগঞ্জ জেলা ত্যাগ করেন।
উল্লেখ্য, এনসিপি-র পক্ষ থেকে পূর্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিস্থল "ধ্বংস" করার যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, তা স্থানীয় জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল। এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার থেকেই গোপালগঞ্জে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
এই ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকায় শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। গোপালগঞ্জের ঘটনার বিচার দাবি করে তারা স্লোগান দেন এবং সড়কে বাঁশ ফেলে যানজটের সৃষ্টি করেন।
গোপালগঞ্জের এই সহিংস ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। শহরে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে।