মেদিনীপুর, ২১শে জুলাই, ২০২৫: "বাংলা ভাষাভাষী হলেই কি বাংলাদেশী? তাহলে আমরা কারা?" - এই প্রশ্ন তুলে আজ মেদিনীপুর শহর এক অভূতপূর্ব বিক্ষোভ মিছিলের সাক্ষী থাকল। হাজার হাজার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে শহর পরিক্রমা করে এই বিশাল মিছিল, যার পরতে পরতে ছিল আবেগ আর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। মিছিল শেষে মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের মাঠে আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানালেন সিপিআই(এম) নেতা মহম্মদ সেলিম।
সম্প্রতি কিছু রাজনৈতিক মহলের পক্ষ থেকে বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের ঢালাও 'বাংলাদেশী' আখ্যা দেওয়ার প্রবণতার তীব্র প্রতিবাদে আজ মেদিনীপুর উত্তাল হয়ে ওঠে। সকাল থেকেই মেদিনীপুর শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন সমবেত হতে শুরু করেন কলেজিয়েট স্কুলের মাঠে। সেখান থেকে সুসজ্জিত প্রতিবাদী ফেস্টুন, ব্যানার আর হাতে বাংলা ভাষার গুরুত্ব ও বাঙালির আত্মপরিচয় তুলে ধরা প্ল্যাকার্ড নিয়ে মিছিল শুরু হয়। "আমরা বাঙালি, বাংলা আমাদের ভাষা", "বাংলা আমাদের রক্তে মেশা, বাংলাদেশী অপবাদ মানছি না", "ভাষা নিয়ে রাজনীতি বন্ধ হোক" - এমন অসংখ্য স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে মেদিনীপুরের রাজপথ। মিছিলে শুধু রাজনৈতিক দলের সদস্যরাই নন, বহু সাধারণ মানুষ, ছাত্র, শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবীরাও অংশ নেন।
মিছিল শেষে কলেজিয়েট স্কুলের মাঠে অনুষ্ঠিত হয় এক বিশাল বিক্ষোভ সভা। এই সভার প্রধান বক্তা ছিলেন সিপিআই(এম) নেতা মহম্মদ সেলিম। তাঁর তেজস্বী ভাষণে তিনি কেন্দ্র সরকারের বিভাজনের রাজনীতির তীব্র নিন্দা করেন। তিনি বলেন, "বাংলা ভাষা আমাদের গর্ব, আমাদের আত্মপরিচয়। এই ভাষাকে পুঁজি করে যারা বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইছে, তারা দেশের শত্রু। বাংলা ভাষাভাষী হলেই কি বাংলাদেশী? তাহলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, সুভাষচন্দ্র বসু - এঁরা কারা ছিলেন? এঁরা কি বাংলাদেশী ছিলেন? এই অপবাদ বাংলার মানুষ কোনোদিন মেনে নেবে না।"
মহম্মদ সেলিম আরও বলেন, "ভোটার কার্ড আছে, আধার কার্ড আছে, এদেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে যাদের নাড়ির টান, তাদের উপর 'বাংলাদেশী' তকমা লাগিয়ে দেওয়ার এই অপচেষ্টা আসলে এক গভীর চক্রান্ত। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রকৃত সমস্যা থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়া এবং এক কৃত্রিম বিভাজন তৈরি করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলা।" তিনি উপস্থিত জনতাকে এই ধরনের বিভেদকামী শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
এদিনের সভা থেকে দাবি জানানো হয়, বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের উপর এই অপবাদ বন্ধ করতে হবে এবং দেশের সকল নাগরিকের সমান অধিকার ও সম্মান নিশ্চিত করতে হবে। মিছিলে অংশগ্রহণকারী এক স্কুল শিক্ষিকা রমা দে বলেন, "আমাদের ভাষা আমাদের গর্ব। এর উপর আক্রমণ আমরা বরদাস্ত করব না।" এক কলেজ ছাত্র সুমিত বিশ্বাস বলেন, "শুধু নির্বাচনের সময় ভোট পাওয়ার জন্য এই ধরনের বিভাজন তৈরি করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে আমরা তরুণ প্রজন্ম সোচ্চার থাকব।
এদিনের এই বিশাল মিছিল ও জনসভা মেদিনীপুর শহরে এক নতুন বার্তা দিয়েছে। বাংলা ভাষা ও বাঙালির আত্মপরিচয়ের উপর আঘাতের বিরুদ্ধে আপামর জনতার যে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ, তা আগামী দিনে রাজনৈতিক মহলে যথেষ্ট প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।