নতুন শতকের একদম শুরুতে, ভারতে ধনী হওয়ার স্বপ্ন যেন আরও বেশি রঙিন হয়ে উঠেছিল। ২০১৪ সালের পর থেকে মিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ৭২% বেড়ে গিয়েছে, ঠিক যেন কেউ আকাশ ছোঁয়ার গল্প বলছে। অথচ এই ২০২৫ সালেই ৩,৫০০ জন ভারতীয় মিলিয়নিয়ার দেশ ছেড়ে চলে যেতে প্রস্তুত—তারা নিয়ে যাবেন ২৬.২ বিলিয়ন ডলার। বাইরে থেকে হয়তো মনে হবে এ কেবলই টাকার হিসেব, কিন্তু এই সংখ্যার পেছনে লুকিয়ে রয়েছে পরিবার, বন্ধুবান্ধব, স্বপ্ন আর নিরালম্ব হয়ে পড়ার যন্ত্রণা।
তাদের অনেকে বলছেন, ট্যাক্সের বাড়তি চাপ, ক্রিপ্টো ও ডিজিটাল লেনদেনে কড়া নিয়ম, ব্যাঙ্কিং ও GST-এর সার্বক্ষণিক নজরদারি তাদের হাঁফিয়ে তুলেছে। কারও কারও কন্ঠে উঠে আসে অভিমান—নিজের ঘরেই যেন পর হয়ে যাওয়ার মত অনুভূতি।
তাই তারা নতুন আশ্রয় খুঁজছেন—বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাত, যেখানে শূন্য কর ও 'গোল্ডেন ভিসা' চটজলদি স্বস্তি এনে দেয়। একটু দূরে আমেরিকার দামি 'গোল্ড কার্ড'ও অনেকের নজর কেড়েছে। ‘আমি কেবল কর বাঁচাতে যাচ্ছি না, আমার সন্তানের জন্য নিরাপত্তা চাই, আমার পরিবারের জন্য শান্তি চাই’—শিলাদিত্য, মুম্বাইয়ের এক স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠাতা, বলেন।
কিন্তু নির্মম বাস্তবতা—এগুলি শুধু আর্থিক সিদ্ধান্ত নয়; জীবন বদলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। কেউ বাবা-মার হাত ছেড়ে যাবেন, কেউ পুরনো স্কুলের বন্ধুরা একসঙ্গে বসে চা খাওয়ার দিনগুলোকে রেখে যাবেন, কেউ নিজের শহরের চেনা বাতাসও। ভারতে মিলিয়নিয়ার সংখ্যায় শীর্ষ ৫ দেশ-ছাড়ার তালিকায় আসা মানে, শুধু অর্থনীতি নয়—একটি জাতির প্রস্তুত স্বপ্ন, উদ্যম আর সম্ভাবনাকেও কোথাও ক্ষয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন অনেকে।
এসব মানুষেরা নতুন দেশে জীবনের নতুন পাতায় লেখেন হয়তো, কিন্তু মন থেকে ভারতকে পুরোপুরি কখনও মুছে ফেলতে পারেন না—ফেলে আসা স্বপ্ন আর শেকড়ে ফিরে যাওয়ার ক্ষীণ স্বপ্ন বয়ে বেড়ান প্রতিটি প্রবাসী হৃদয়ে।