কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, কারণ কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি রাজ্য সরকারের আনা ‘অপরাজিতা মহিলা ও শিশু (ফৌজদারি আইন সংশোধন) বিল, ২০২৪’ ফেরত পাঠিয়েছে। এই বিলটি নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া নৃশংস অপরাধের প্রতিবাদে এবং আরও কঠোর শাস্তির দাবিতে রাজ্য বিধানসভায় সর্বসম্মতভাবে পাস হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্র এবং রাজ্যপালের আপত্তিতে বিলটির ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।
অপরাজিতা বিলের মূল উদ্দেশ্য ছিল ধর্ষণ এবং আক্রমণের মতো গুরুতর অপরাধের জন্য বাধ্যতামূলক যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং মৃত্যুদণ্ডের মতো কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা। এই বিলের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল বিচারকের রায়ের ক্ষেত্রে বিচারিক বিবেচনার (judicial discretion) সুযোগ বাতিল করা। রাজ্য সরকারের মতে, এর ফলে দোষীরা সহজে পার পাবে না এবং অপরাধ প্রতিরোধে এটি আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
তবে, ভারতের রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যের রাজ্যপাল উভয়েই বিলটির 'কঠোরতা ও আনুপাতিকতা' (severity and proportionality) নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, সাজা প্রদানের ক্ষেত্রে বিচারকদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা সাংবিধানিক নীতির পরিপন্থী হতে পারে এবং আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
এই ঘটনা রাজ্য সরকারের তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) এবং কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের মধ্যে চলমান বিরোধকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তৃণমূল এই পদক্ষেপকে রাজ্যের আইন প্রণয়নের স্বাধীনতায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছে এবং বিজেপির বিরুদ্ধে নারী ও শিশুদের সুরক্ষার বিষয়টিকে রাজনৈতিক স্বার্থে অবহেলা করার অভিযোগ তুলেছে।
এই বিলের ভবিষ্যৎ এখন পুরোপুরি অনিশ্চিত। এটি ভারতীয় বিচার ব্যবস্থায় ফেডারেলিজম, বিচারিক সংস্কার এবং অপরাধীদের জন্য আইনি সুরক্ষার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের অধিকার নিয়ে বৃহত্তর বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।