" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory বিমান পরিষেবা: লাভের আকাশ ছুঁতে গিয়ে কি যাত্রী সুরক্ষার বলি হচ্ছে? Profit or Peril: Is India's Aviation Boom Undermining Passenger Safety? //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

বিমান পরিষেবা: লাভের আকাশ ছুঁতে গিয়ে কি যাত্রী সুরক্ষার বলি হচ্ছে? Profit or Peril: Is India's Aviation Boom Undermining Passenger Safety?

 


ভূমিকা: এক ঝলক ঝলমলে আকাশ, কিন্তু তার নিচে চাপা পড়া অন্ধকার

ভারতের বিমান পরিষেবা খাত বর্তমানে এক অভূতপূর্ব গতিতে এগোচ্ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে দেশীয় যাত্রী সংখ্যা ১৫৪ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে এবং আন্তর্জাতিক রুটগুলিতেও রেকর্ড সংখ্যক যাত্রী চলাচল করেছে। দেশজুড়ে নতুন বিমানবন্দর তৈরি হচ্ছে, পুরোনো বিমানবন্দর আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে, এবং বিমান সংস্থাগুলিও তাদের বহর দ্রুত সম্প্রসারিত করছে। কিন্তু এই উজ্জ্বল চিত্রের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক গভীর সংকট। মুনাফার চরম লোভ এবং প্রতিযোগিতার চাপে যাত্রী সুরক্ষার মতো একটি মৌলিক বিষয় ক্রমাগত অবহেলিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা এবং আর্থিক প্রতিবেদন প্রমাণ করে দিয়েছে যে, আমাদের আকাশপথ আর নিরাপদ নয়, এটি যেন এক ভয়ঙ্কর জুয়া হয়ে উঠেছে, যার চরম মূল্য দিতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের।


মুনাফার দৌড়ে পিছিয়ে নেই কেউ

২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের আর্থিক প্রতিবেদনগুলি এই শিল্পের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। যেখানে ইন্ডিগো-এর মতো কিছু সংস্থা বড় অঙ্কের লাভ করছে, সেখানে এয়ার ইন্ডিয়ার মতো সংস্থাগুলি বিপুল লোকসানের বোঝা টানছে।

  • এয়ার ইন্ডিয়া (গ্রুপ): টাটা গ্রুপের অধীনে থাকা এয়ার ইন্ডিয়া, ভিস্তারা এবং এয়ারএশিয়া ইন্ডিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করে, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ₹১০,৮৫৯ কোটি টাকা লোকসান করেছে। যদিও রাজস্ব ১৮% বৃদ্ধি পেয়ে ₹৭৮,৬৩৬ কোটিতে পৌঁছেছে, তবুও আধুনিকীকরণ, বহর সম্প্রসারণ এবং দুটি সংস্থার একীকরণ (merger) সংক্রান্ত বিশাল খরচের কারণে লোকসান বেড়েছে।

  • ইন্ডিগো: ইন্ডিগো এই কঠিন পরিস্থিতিতেও তার অবস্থান ধরে রেখেছে এবং ₹৭,২৫৮ কোটি টাকা লাভ করেছে। তাদের সফলতার মূল কারণ হলো বিশাল নেটওয়ার্ক, কর্মদক্ষতা এবং খরচ নিয়ন্ত্রণের উপর কঠোর নজরদারি।

  • আকাষা এয়ার: নতুন সংস্থা হয়েও আকাষা এয়ার তাদের রাজস্ব ৪৯% বৃদ্ধি করে লাভজনক হতে সক্ষম হয়েছে, যা প্রমাণ করে যে, এই বাজারে টিকে থাকার জন্য কৌশলগত দক্ষতা অপরিহার্য।

এয়ার ইন্ডিয়ার মতো বড় সংস্থার বিপুল লোকসান এবং ইন্ডিগোর মতো সংস্থার লাভজনক হওয়া এটাই প্রমাণ করে যে, তীব্র প্রতিযোগিতার এই বাজারে টিকে থাকতে হলে হয় চরম খরচ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, নাহলে বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগের ঝুঁকি নিতে হবে। কিন্তু এই দুটি ক্ষেত্রেই যাত্রীদের সুরক্ষার বিষয়টি প্রায়শই উপেক্ষিত হচ্ছে।


নিরাপত্তাহীনতার এক ভয়ঙ্কর চিত্র

আর্থিক চাপের মুখে বিমান সংস্থাগুলি কীভাবে সুরক্ষার সঙ্গে আপস করছে, তার প্রমাণ পাওয়া যায় ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন (DGCA)-এর রিপোর্ট এবং অন্যান্য তদন্তে।

  • কর্মচারীদের ক্লান্তি: ডিগিসিএ বারবার এয়ার ইন্ডিয়ার মতো সংস্থাকে সতর্ক করেছে যে তারা কম সংখ্যক কেবিন ক্রু দিয়ে দীর্ঘ পাল্লার ফ্লাইট পরিচালনা করছে, যা আন্তর্জাতিক নিয়ম লঙ্ঘন করে। পাইলট এবং কেবিন ক্রুদের প্রয়োজনীয় বিশ্রাম না দিয়েই কাজ করানো হচ্ছে। ক্লান্তি নিয়ে কাজ করা কর্মীদের পক্ষে জরুরি পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া কতটা সম্ভব, তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।

  • প্রশিক্ষণের অভাব: রিপোর্টে দেখা গেছে, অনেক পাইলট এবং ক্রুদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করানো হয়নি। সময়মতো সিমুলেটর চেক না করা এবং জরুরি প্রশিক্ষণে অবহেলা একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

  • আহমেদাবাদের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা: ২০২৫ সালের জুন মাসে আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৭১-এর দুর্ঘটনাটি আমাদের চোখের সামনে এক নির্মম বাস্তবতা তুলে ধরেছে। তদন্তে জানা গেছে, ত্রুটিপূর্ণ প্রাক-উড্ডয়ন (pre-takeoff) চেক এবং রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতির কারণে এই বিপর্যয় ঘটেছিল, যেখানে ২৬০ জন নিরীহ মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়া হয়। এই দুর্ঘটনা প্রমাণ করে যে, সামান্যতম অবহেলাও কতটা ভয়াবহ হতে পারে।

  • ডিজিসিএ-এর দুর্বলতা: এই পরিস্থিতি সত্ত্বেও, নিয়ন্ত্রক সংস্থা DGCA-এর ক্ষমতা সীমিত। তাদের দপ্তরে ৫৩% পদ খালি পড়ে আছে। এত কম কর্মী দিয়ে এত বড় একটি শিল্পের উপর সঠিক নজরদারি চালানো কার্যত অসম্ভব। উপরন্তু, সংস্থাটির বিরুদ্ধে "প্রতিক্রিয়াশীল" (reactive) হওয়ার অভিযোগ উঠেছে, অর্থাৎ, দুর্ঘটনা ঘটার পরই তারা নড়েচড়ে বসে, আগে থেকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয় না।


ভবিষ্যৎ কি অন্ধকারে?

ভারতের বিমান পরিষেবা খাত বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল খাতগুলির মধ্যে অন্যতম। ২০৩০ সালের মধ্যে যাত্রী সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এই বিপুল চাহিদা পূরণের জন্য পরিকাঠামো এবং সুরক্ষা ব্যবস্থার দ্রুত উন্নতি না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকে যাবে।

বিমান সংস্থাগুলোকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে, মুনাফার চেয়ে যাত্রীর জীবন অনেক বেশি মূল্যবান। সুরক্ষাকে তাদের ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে হবে, এবং ডিগিসিএ-কেও আরও শক্তিশালী ও স্বাধীন করতে হবে। এই শিল্পে এখন প্রয়োজন কঠোর নজরদারি, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা। তা না হলে, লোভের এই আকাশ আমাদের সবার জন্য এক চরম বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies