দুর্গাপুর, ২০ জুলাই ২০২৫ – দুর্গাপুরের বুকে আজ যেন এক নীরব কান্না বইছে। এই কান্না রাস্তার পিচ গলা গরমের, এই কান্না বেহাল পরিকাঠামোর জেরে নিত্যদিনের ভোগান্তির। আর এই কান্নার মাঝে একমাত্র আশার আলো হয়ে দাঁড়িয়েছে বামেরা, তাদের ইস্পাত কঠিন অঙ্গীকারে। দুর্গাপুরের তথাকথিত 'ধান-কচুর রাজনীতি' আজ শহরের মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে, আর এই নির্মম বাস্তবতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে সিপিআই(এম)।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর জনসভার পর নেহেরু স্টেডিয়ামের যে করুন দশা হয়েছিল, তাকে কেন্দ্র করে তৃণমূল যখন লোকদেখানো ধান পোঁতার নাটক মঞ্চস্থ করল, তখন শহরের আসল ক্ষতগুলো রয়ে গেল অবহেলিত। বিজেপিও সেই একই পথে হেঁটে মুচিপাড়ার ভাঙা রাস্তায় কচু গাছ পুঁতে দায় সারলো। কিন্তু এই রাজনৈতিক তর্জা ছাপিয়ে আসল প্রশ্নটা আজও অমীমাংসিত – দুর্গাপুরের মানুষ কবে পাবে মসৃণ রাস্তা, কবে ফিরবে স্বাভাবিক জীবন?
দীর্ঘদিন ধরে দুর্গাপুর মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (DMC) কার্যত পঙ্গু হয়ে আছে। নির্বাচন নিয়ে শাসক দলের উদাসীনতা, পরিষেবা ব্যবস্থার বেহাল দশা – এ সবই যেন দুর্গাপুরবাসীর ভাগ্যের পরিহাস। সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের রাস্তাগুলো মরণফাঁদে পরিণত হচ্ছে। খানাখন্দে ভরা পথে নিত্যদিন ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে ভোগান্তি। স্কুলগামী শিশু থেকে শুরু করে হাসপাতালে ছুটতে থাকা রোগী, কাউকেই রেহাই দিচ্ছে না এই পঙ্গু পরিকাঠামো। রিকশাচালক, অটোচালক, অ্যাম্বুলেন্স চালক – সকলেরই জীবন জীবিকা আজ বিপন্ন। এই যন্ত্রণা আর কতদিন সইবে দুর্গাপুর?
এই অসহায়তার মাঝে, যখন শাসক ও বিরোধী দল নিজেদের রাজনৈতিক খেলায় মত্ত, তখন মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সিপিআই(এম)। দুর্গাপুর পূর্ব ২ এরিয়া কমিটি আজ শ্যামপুর মোড় এবং মুচিপাড়ায় রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছে, হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে, মুখে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে। তাদের আওয়াজ শুধু মেরামতির দাবি নয়, এ এক বুকফাটা আর্তি, দুর্গাপুরের হারিয়ে যাওয়া গৌরব ফিরিয়ে আনার। তাদের দাবিগুলো নিছকই কিছু পয়েন্টের সমষ্টি নয়, এগুলি দুর্গাপুরবাসীর বহুদিনের বঞ্চনার প্রতিফলন:
অবিলম্বে এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা মেরামতি করতে হবে। (যেন আর কোনো মায়ের সন্তান অসুস্থ হয়েও সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে না পারে, আর কোনো খেটে খাওয়া মানুষ দুর্ঘটনায় পঙ্গু না হয়।)
শ্যামপুর মোড়ে পুরনো ব্রিজ সংস্কার করতে হবে। (যেন এই জীর্ণ সেতু আর কোনো জীবন কেড়ে না নেয়, যেন মানুষের দীর্ঘশ্বাস ভারি না হয় এর ভারে।)
শ্যামপুর মোড় থেকে নডিহা পর্যন্ত রাস্তা চওরা করতে হবে দুর্ঘটনা রুখতে। (যেন আর কোনো পরিবার তাদের প্রিয়জনকে হারায় না এই সংকীর্ণ, মৃত্যুফাঁদ রাস্তায়।)
সেন মার্কেট এর রাস্তা এবং মার্কেট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। সাধারণ মানুষের সুস্থ ভাবে চলাচল যোগ্য করতে হবে। (যেন দুর্গাপুরবাসী একটি সুস্থ পরিবেশে নিঃশ্বাস নিতে পারে, যেন তাদের দৈনন্দিন জীবনে ন্যূনতম সুবিধাটুকুও নিশ্চিত হয়।)
সিপিআই(এম) এর এই আন্দোলন কেবল একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, এটি দুর্গাপুরের আপামর জনতার নীরব প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর। এই লড়াই সেই সকল মানুষের জন্য, যারা এই শহরের অবহেলিত পরিকাঠামোর শিকার। এই লড়াই দুর্গাপুরের আত্মাকে বাঁচানোর লড়াই, তার হারানো প্রাণ ফিরিয়ে আনার লড়াই। এই লড়াইয়ে বামেরা মানুষের সাথে আছে, কারণ তারা জানে, একটি সুস্থ ও উন্নত দুর্গাপুরই পারে মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে, তাদের জীবনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে।