" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory ভারতে সাইবার জালিয়াতির ক্রমবর্ধমান প্রবণতা: পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহাসিক 'ডিজিটাল অ্যারেস্ট' রায়ের মাধ্যমে পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

ভারতে সাইবার জালিয়াতির ক্রমবর্ধমান প্রবণতা: পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহাসিক 'ডিজিটাল অ্যারেস্ট' রায়ের মাধ্যমে পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ



কল্যাণী, ১৮ জুলাই, ২০২৫: পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে এই প্রথম, এক কোটি টাকারও বেশি অঙ্কের 'ডিজিটাল অ্যারেস্ট' প্রতারণা মামলায় নয় জন অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা ঘোষণা করা হলো। এই রায় দেশের সাইবার অপরাধ দমনে এক নতুন দিশা দেখাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

পুলিশ সূত্রে খবর, গত বছর নদীয়ার এক অবসরপ্রাপ্ত কৃষিবিজ্ঞানীকে 'ডিজিটাল অ্যারেস্ট'-এর ভয় দেখিয়ে দফায় দফায় এক কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল এই প্রতারণা চক্র। প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পেরে ওই বিজ্ঞানী কল্যাণী সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

তদন্তে নেমে কল্যাণী সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ জানতে পারে, এই চক্রের মূল মাথা কম্বোডিয়ায় বসে কাজ করছে এবং ভারতীয় সিম কার্ড ব্যবহার করে এই প্রতারণা চালানো হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত, যেমন মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, হরিয়ানা ও গুজরাটে অভিযান চালিয়ে মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে একাধিক মোবাইল ফোন, ব্যাঙ্কের পাসবই, চেকবই, প্যান কার্ড-সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার হয়।

পুলিশ ২ হাজার পাতার চার্জশিট দাখিল করে। সমস্ত পক্ষের সওয়াল-জবাব শেষে বৃহস্পতিবার কল্যাণী মহকুমা আদালত এই মামলায় অভিযুক্ত নয় জনকে দোষী সাব্যস্ত করে। আজ, শুক্রবার তাদের সাজা ঘোষণা করা হয়।

আদালতের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন সরকারি আইনজীবী ও পুলিশ মহল। তারা এটিকে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং বলেছেন, এই রায় ভারতের ডিজিটাল প্রতারণা বিরোধী আইনি লড়াইয়ে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।

সাইবার জালিয়াতি বর্তমানে ভারতের জন্য একটি ক্রমবর্ধমান এবং মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্রুতগতিতে ডিজিটালকরণের পাশাপাশি ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় সাইবার অপরাধীদের জন্য একটি উর্বর ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে, যা ব্যক্তি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং জাতীয় অর্থনীতি - সব কিছুকেই প্রভাবিত করছে।

পরিসংখ্যানের মাধ্যমে ভারতের সাইবার জালিয়াতির পরিস্থিতি নিচে তুলে ধরা হলো:


১. অভিযোগের উদ্বেগজনক বৃদ্ধি:


  • ২০১৯ সাল থেকে প্রায় দশগুণ বৃদ্ধি: ২০২৪ সালে ভারতে ১.৯১ মিলিয়ন সাইবার অপরাধের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে, যা ২০২৩ সালের ১.৫৫ মিলিয়ন অভিযোগের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি এবং ২০১৯ সাল থেকে প্রায় দশগুণ বেশি। এটি নির্দেশ করে যে সাইবার অপরাধ কতটা দ্রুতগতিতে ভারতীয় নাগরিকদের প্রভাবিত করছে।

  • ২৫ লক্ষ ছাড়িয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস: ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ সাইবার অপরাধের অভিযোগের সংখ্যা ২.৫ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে, যা এই প্রবণতার অব্যাহত ঊর্ধ্বগতি নির্দেশ করে।


২. আর্থিক ক্ষতির বৃদ্ধি:


  • ২০২৪ সালে ২২,৮১২ কোটি টাকা ক্ষতি: ২০২৪ সালে ভারতে ডিজিটাল জালিয়াতির কারণে আনুমানিক ২২,৮১২ কোটি টাকা (প্রায় ২.৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ক্ষতি হয়েছে।

  • ২০২৫ সালে ২০,০০০ কোটি টাকা ক্ষতির পূর্বাভাস: কিছু প্রতিবেদন অনুমান করে যে ২০২৫ সালে সাইবার অপরাধের কারণে ভারত ২০,০০০ কোটি টাকা হারাতে পারে।

  • জিডিপির ০.৭% অর্থ অপচয়: ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (I4C) অনুমান করে যে ২০২৫ সালে ভারতীয়রা সাইবার জালিয়াতির কারণে ১.২ লক্ষ কোটি টাকার বেশি হারাতে পারে, যা ভারতের জিডিপির ০.৭%

  • ২০২৫ সালের প্রথম ৫ মাসে ৭,০০০ কোটি টাকা ক্ষতি: ২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসেই ভারতীয়রা অনলাইন স্ক্যামের কারণে ৭,০০০ কোটি টাকা হারিয়েছে, যা প্রতি মাসে প্রায় ১,০০০ কোটি টাকা।

  • ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি: ক্রেডিট, ডেবিট কার্ড এবং ইন্টারনেট ব্যাংকিং জালিয়াতির কারণে আর্থিক ক্ষতি ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ৬৯.৬৮ কোটি টাকা থেকে ১৭৭.০৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।


৩. সাইবার জালিয়াতির প্রধান প্রকারভেদ (পরিসংখ্যানের সাথে):


  • "ডিজিটাল অ্যারেস্ট" স্ক্যাম: এই ধরনের ছদ্মবেশী জালিয়াতি, যেখানে প্রতারকরা পুলিশ বা সরকারি আধিকারিক হিসাবে নিজেদের পরিচয় দেয়, তা একাই ২০২৪ সালে ১,৯৩৬ কোটি টাকা ক্ষতির জন্য দায়ী। এটি ভয়-ভিত্তিক সামাজিক প্রকৌশলের কার্যকারিতা তুলে ধরে।

  • বিনিয়োগ কেলেঙ্কারি (স্টক ট্রেডিং সহ): এটি একটি প্রধান উদ্বেগের কারণ, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলি থেকে উদ্ভূত কেলেঙ্কারিগুলি। উদাহরণস্বরূপ, অন্ধ্রপ্রদেশে প্রতি মাসে ৩০-৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ কেলেঙ্কারি, ডিজিটাল অ্যারেস্ট স্কিম এবং টাস্ক-ভিত্তিক প্রতারণার কারণে ক্ষতি হয়, যার বেশিরভাগই কম্বোডিয়া এবং অন্যান্য দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশ থেকে আসে।

  • ফিশিং আক্রমণ: ফিশিং এখনও অত্যন্ত প্রচলিত। ২০২৪ সালে, ৮০% ফিশিং ইমেলের সাথে এআই টুলস জড়িত ছিল, যা এর নতুন স্তরের পরিশীলন নির্দেশ করে। ভারত বিশ্বব্যাপী ফিশিং আক্রমণের জন্য তৃতীয় বৃহত্তম দেশ হিসাবে স্থান পেয়েছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের পরেই।

  • ব্র্যান্ড ছদ্মবেশ: শুধুমাত্র ব্র্যান্ড ছদ্মবেশ সম্পর্কিত স্ক্যামগুলি ২০২৫ সালে ব্যবসা এবং ভোক্তাদের জন্য ৯,০০০ কোটি টাকা ক্ষতি ঘটাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। জাল ওয়েবসাইট ডোমেন ২০২৫ সালে ৬৫% বৃদ্ধি পাবে এবং জাল আর্থিক অ্যাপ ৮০%-এর বেশি বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

  • র‍্যানসমওয়্যার আক্রমণ: ২০২৪ সালে ভারত প্রায় ১.৭৮ মিলিয়ন র‍্যানসমওয়্যার আক্রমণের সাক্ষী ছিল। এই আক্রমণগুলি ব্যবসার জন্য গুরুতর আর্থিক এবং অপারেশনাল পরিণতি বয়ে আনতে পারে।


৪. ভৌগোলিক হটস্পট এবং কার্যপ্রণালী:


  • দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কেন্দ্র: বিনিয়োগ এবং ডিজিটাল অ্যারেস্ট স্ক্যাম সহ সাইবার জালিয়াতির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ কম্বোডিয়া, মায়ানমার, ভিয়েতনাম এবং লাওসের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার "স্ক্যাম কম্পাউন্ড" থেকে পরিচালিত হয়। ২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসে যে ৭,০০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে, তার অর্ধেকেরও বেশি এই অঞ্চলগুলির স্ক্যামের কারণে। সরকার কম্বোডিয়ায় অন্তত ৪৫টি, লাওসে পাঁচটি এবং মায়ানমারে একটি এমন স্ক্যাম কম্পাউন্ড চিহ্নিত করেছে।

  • "মুল অ্যাকাউন্ট" এর ব্যবহার: চুরি করা অর্থ পাচারের জন্য "মুল অ্যাকাউন্ট" এর ব্যবহার ব্যাপক, I4C প্রতিদিন প্রায় ৪,০০০ এমন অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করে। এই অ্যাকাউন্টগুলি প্রায়শই অজান্তে ব্যক্তিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং তহবিল দ্রুত ক্রিপ্টোকারেন্সিতে রূপান্তরিত করে বিদেশে স্থানান্তরিত করার আগে এককালীন লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত হয়।

  • মুল অ্যাকাউন্টের উচ্চ-সংখ্যক রাজ্য: মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ এবং কর্ণাটকের মতো রাজ্যগুলিতে মুল অ্যাকাউন্টের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।


৫. পুনরুদ্ধার হার এবং চ্যালেঞ্জ:


  • নিম্ন পুনরুদ্ধার হার: ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, সাইবার জালিয়াতিতে হারানো তহবিলের পুনরুদ্ধার হার উল্লেখযোগ্যভাবে কম, প্রায়শই ২০% এর নিচে। এটি মূলত চুরি করা তহবিলের দ্রুত মুল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে চলাচল এবং ক্রিপ্টোকারেন্সিতে রূপান্তরের কারণে ঘটে।

  • আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপর ক্রমবর্ধমান বোঝা: অভিযোগের ঢেউ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির উপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছে। উদাহরণস্বরূপ, কর্ণাটকে ২০২২ সালে ২০,৮৯৪টি থেকে ২০২৪ সালে ৯৭,৯২৯টি সাইবার অপরাধের প্রতিবেদনে পাঁচগুণ বৃদ্ধি দেখা গেছে।


৬. নির্দিষ্ট খাতের উপর প্রভাব:


  • ব্যাংকিং এবং আর্থিক পরিষেবা: ২০২৫ সালে এই খাতটি প্রায় ৮,২০০ কোটি টাকা ক্ষতির শিকার হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা সাইবার অপরাধ থেকে মোট ক্ষতির ৪১%।

  • খুচরা ও ই-কমার্স: ২০২৫ সালে এই খাতটি সাইবার অপরাধের কারণে ৫,৮০০ কোটি টাকা হারাতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।


পরিসংখ্যানগুলি দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণ করে যে সাইবার জালিয়াতি ভারতের জন্য একটি গুরুতর এবং ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ। অভিযোগের বিপুল পরিমাণ এবং ক্রমবর্ধমান আর্থিক ক্ষতি কঠোর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, ব্যক্তি ও ব্যবসার জন্য শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা অবকাঠামো এবং উন্নত আন্তঃসীমান্ত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহযোগিতার জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। ভারত যখন একটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল অর্থনীতির দিকে তার যাত্রা অব্যাহত রেখেছে, তখন সাইবার জালিয়াতির বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা জোরদার করা আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং জনবিশ্বাসের সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies