দুর্গাপুর, ২২শে জুলাই, ২০২৫: রুক্ষ গ্রীষ্মের পর বর্ষার আগমন যেমন প্রকৃতিতে সজীবতা আনে, তেমনই দুর্গাপুর সিটিসেন্টারের এনবিএ (National Book Agency) স্টলে আজ থেকে শুরু হওয়া 'বইয়ের হাট' শহরবাসীর মনে নতুন জ্ঞানের সজীবতা এনেছে। আগামী ৪ঠা আগস্ট পর্যন্ত চলা এই বিশেষ বইমেলায় পাঠককুল ৫০% ছাড়ে পছন্দের বই কেনার সুবর্ণ সুযোগ পাচ্ছেন। শিক্ষানুরাগীদের জন্য এটি এক অভূতপূর্ব সুযোগ, যেখানে নানা ধারার বইয়ের বিশাল সম্ভার প্রদর্শিত হচ্ছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও বিশিষ্টজনের উপস্থিতি:
দুর্গাপুরের বুকে জ্ঞানের এই মহাযজ্ঞের সূচনা হয়েছে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম বর্ধমান জেলা সিপিআই(এম)-এর সম্পাদক গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জি, যিনি জেলার রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে এক পরিচিত মুখ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বর্ষীয়ান বাম নেতা ভজন চক্রবর্তী, যাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং আদর্শনিষ্ঠা সকলের কাছেই সুবিদিত। এছাড়াও, শ্রমিক আন্দোলনের এক অন্যতম পরিচিত মুখ এবং সিপিআই(এম) পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরেন।
মার্কসীয় সাহিত্যের গুরুত্বে জোর:
বক্তাদের প্রত্যেকের বক্তব্যে একটি বিষয় বিশেষভাবে উঠে আসে – মার্কসীয় সাহিত্যের অপরিহার্যতা। গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জি তাঁর বক্তব্যে বলেন, "বর্তমান সমাজে যে বহুমুখী সংকট, তা অর্থনৈতিক হোক বা সামাজিক, তার মূল কারণগুলি অনুধাবন করতে এবং তার স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করতে মার্কসীয় দর্শনই একমাত্র পথনির্দেশিকা।" ভজন চক্রবর্তী, তাঁর গভীর প্রজ্ঞা থেকে বলেন, "যুগে যুগে মার্কসীয় সাহিত্য কেবল পুঁথিগত বিদ্যা নয়, এটি একটি জীবনদর্শন যা শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করে। আজকের প্রজন্মকে এই সাহিত্য চর্চার প্রতি আরও মনোযোগী হতে হবে।" প্রাক্তন মেয়র রথিন রায় যোগ করেন, "জ্ঞানের আলো ছাড়া সমাজ এগোতে পারে না। আর সেই জ্ঞানকে সঠিক পথে চালিত করতে মার্কসীয় দর্শনের প্রাসঙ্গিকতা আজও অটুট।" বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় শ্রমিক শ্রেণীর অধিকার ও তাদের সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে মার্কসীয় বিশ্লেষণের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন।
পাঠকদের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ:
এই বইয়ের হাটে সাহিত্য, ইতিহাস, বিজ্ঞান, রাজনীতি, দর্শন, অর্থনীতি সহ বিভিন্ন বিষয়ের বই ৫০% ছাড়ে পাওয়া যাচ্ছে। এনবিএ স্টলের কর্মীরা জানান, এই ছাড়ের কারণে শিক্ষানুরাগীদের ভিড় বাড়বে বলে তাঁরা আশা করছেন। বিশেষত, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমন ছাত্রছাত্রী এবং গবেষণা কাজে যুক্ত ব্যক্তিরাও এই হাটে তাঁদের প্রয়োজনীয় বই খুঁজে পাবেন। বই কেবল বিনোদন নয়, জ্ঞানার্জনের এক অন্যতম মাধ্যম। বর্তমান ডিজিটাল যুগে যখন বই পড়ার অভ্যাস কমে আসছে, তখন এমন একটি উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।
দুর্গাপুরের সাংস্কৃতিক ও বৌদ্ধিক জীবনে নতুন মাত্রা:
বইয়ের এই হাট দুর্গাপুরের সাংস্কৃতিক ও বৌদ্ধিক জীবনে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এটি শুধুমাত্র বই কেনাবেচার স্থান নয়, এটি জ্ঞানচর্চা ও মতাদর্শের আদান-প্রদানের একটি ক্ষেত্রও বটে। আগামী ৪ঠা আগস্ট পর্যন্ত চলা এই বইমেলা দুর্গাপুরের পাঠক সমাজে এক নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই ধরনের উদ্যোগগুলি সমাজকে সঠিক দিশা দেখাতে এবং একটি শিক্ষিত ও প্রগতিশীল সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।