টোকিও: একটি সাধারণ চকোলেট বার কিভাবে একটি দেশের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হতে পারে তার এক অসাধারণ উদাহরণ হলো জাপানে কিট ক্যাট (Kit Kat)-এর জনপ্রিয়তা। এর সাফল্যের মূল কারণ হলো সাংস্কৃতিক অভিযোজন এবং উদ্ভাবনী বিপণন কৌশল।
ভাষাগত এক চমৎকার মিল: কিট ক্যাটের জনপ্রিয়তার সবচেয়ে বড় কারণ এর নামের সাথে জাপানি শব্দগুচ্ছ "Kitto Katsu" (きっと勝つ)-এর ধ্বনিগত মিল, যার অর্থ "তুমি নিশ্চিত জিতবে"। জাপানে, বিশেষ করে পরীক্ষার মরসুমে, শিক্ষার্থীরা একে অপরের সাফল্যের জন্য শুভকামনা জানায়। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে নেসলে (Nestlé) কিট ক্যাটকে একটি সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। শিক্ষার্থীরা একে অপরের জন্য শুভকামনা হিসেবে কিট ক্যাট উপহার দেওয়া শুরু করে।
উপহারের সংস্কৃতি: জাপানের উপহার দেওয়া-নেওয়ার সংস্কৃতি (Omiyage) কিট ক্যাটের জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়ে তোলে। নেসলে এই ধারাকে অনুসরণ করে বিভিন্ন স্থানীয় ও ঋতুভিত্তিক স্বাদের কিট ক্যাট বাজারে আনে, যেমন মাচা গ্রিন টি, ওয়াসাবি এবং সয়া সস। ভ্রমণের সময় বা বন্ধু-বান্ধবদের উপহার দেওয়ার জন্য এই ধরনের অনন্য স্বাদের কিট ক্যাট আদর্শ হয়ে ওঠে।
উদ্ভাবনী বিপণন কৌশল: নেসলে জাপানে একাধিক উদ্ভাবনী বিপণন কৌশল গ্রহণ করে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল জাপান পোস্টের সাথে অংশীদারিত্ব। এর মাধ্যমে "কিট ক্যাট মেইল" চালু করা হয়, যেখানে মানুষ ডাকঘরের মাধ্যমে লিখিত বার্তা সহ কিট ক্যাট পাঠাতে পারতো। এটি কেবল একটি বিপণন কৌশল ছিল না, বরং কিট ক্যাটকে একটি ব্যক্তিগত এবং অর্থপূর্ণ যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে গড়ে তুলেছিল।
পপ সংস্কৃতির সাথে মিশে যাওয়া: কিট ক্যাট জাপানি পপ সংস্কৃতির সাথেও মিশে যায়। রঙিন ও আকর্ষণীয় মোড়ক, অ্যানিমে-ভিত্তিক সহযোগিতা এবং স্থানীয় ট্রেন্ডের সাথে যুক্ত হওয়ার কারণে এটি কেবল একটি স্ন্যাকস হিসেবে নয়, বরং একটি ফ্যাশনেবল সংগ্রহযোগ্য বস্তু হিসেবেও জনপ্রিয়তা লাভ করে।
বাজারের সাফল্য: ১৯৭৩ সালে জাপানে আসার পর কিট ক্যাট ২০১২ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে দেশটির সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া কনফেকশনারি ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। সীমিত সংস্করণের স্বাদ এবং নতুনত্বের প্রতি জাপানি বাজারের আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে নেসলে কিট ক্যাটকে সফলভাবে একটি সাংস্কৃতিক প্রতীকে পরিণত করে।