বিজ্ঞান প্রতিবেদন | ২ জুলাই ২০২৫ |
এক বিস্ময়কর ও ভাবনাপ্রবণ পর্যবেক্ষণে বিজ্ঞানীরা এবং দার্শনিকরা মনে করছেন, মহাবিশ্ব আসলে চিরকালই একটি নির্দিষ্ট দিকে এগিয়ে চলেছে—যেখানে বিশৃঙ্খলা (অর্থাৎ এন্ট্রপি) বাড়ে।
এই ধারণাটি সাধারণ হলেও গভীর অর্থবাহী: মহাবিশ্বের প্রতিটি জিনিস ধ্বংস বা বিশৃঙ্খলার দিকে অগ্রসর হয়। পারমাণবিক কাঠামো হোক, মানুষের কোষ বা ডিএনএর বিকৃতি, কিংবা গ্যালাক্সির বিস্তার—সময়ের তীর সবসময় ভবিষ্যতের দিকে যায়, অতীত থেকে অগ্রসর হয়ে এক অনিবার্য বিশৃঙ্খলার দিকে।
এই সূত্র অনুযায়ী, আমরা মানুষরাও বার্ধক্য ও মৃত্যু বরণ করি শুধুমাত্র এই কারণে যে আমাদের শরীরের কোষ, ডিএনএ, ও প্রোটিন ক্রমাগত বিশৃঙ্খল হয়ে ওঠে। এক সময় শরীর তার সর্বোচ্চ বিশৃঙ্খল অবস্থায় পৌঁছায় এবং মহাবিশ্ব তখন তাকে ছেড়ে দেয়, কারণ প্রক্রিয়াটি শেষ হয়ে গেছে।
এই বিষয়টি পদার্থবিজ্ঞানের একটি মৌলিক সূত্র—তাপগতিবিদ্যার (Thermodynamics) দ্বিতীয় সূত্র—এর সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। একটি বল পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়লে, তার স্থিতিশক্তি (potential energy) গতিশক্তিতে (kinetic energy) রূপান্তরিত হয়, এবং কিছু শক্তি তাপ হিসেবে নষ্ট হয়। বলটি আর স্বাভাবিকভাবে তার আগের উচ্চতায় ফিরে যায় না। ঠিক তেমনি, সময়ও পিছিয়ে যায় না, কারণ অতীতের কম বিশৃঙ্খলার অবস্থায় ফিরে যাওয়া প্রকৃতির নিয়ম বিরুদ্ধ।
তাহলে প্রশ্ন উঠে: সময় কি কেবল বিশৃঙ্খলার বৃদ্ধির দিকটাই নির্দেশ করে? যদি একদিন মহাবিশ্ব এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে যায় যেখানে আর কোনও পরিবর্তন, বিকৃতি বা বিশৃঙ্খলা সম্ভব না—একটি "সর্বোচ্চ এন্ট্রপি" অবস্থা—তাহলে সময়ও কি থেমে যাবে?
একজন বিজ্ঞানীর ভাষায়, "মহাবিশ্বের শেষটা কোনও মহাবিস্ফোরণ নয়, বরং নীরবতা—একটা স্তব্ধতা, যেখানে আর কোনও ঘটনা ঘটবে না, আর কোনও শক্তি কাজ করবে না, এবং সময়ও আর প্রবাহিত হবে না।"
এই বিজ্ঞানভিত্তিক কিন্তু কাব্যিক দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের অস্তিত্ব যেমন ক্ষণস্থায়ী, তেমনি মূল্যবান—এবং এই বিশৃঙ্খলার মাঝেই জীবন ও সময়ের আসল সৌন্দর্য লুকিয়ে রয়েছে।