Jamuria, ২৫ আগস্ট: কাজী নজরুল ইসলামের জন্মস্থান চুরুলিয়ার নিকটবর্তী জানুড়িয়ায় আয়োজিত দ্বিতীয় কাজী নজরুল ইসলাম স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা না হয়েও, সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মোহম্মদ সেলিমের সমাপনী বক্তব্য আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। তাঁর ভাষণটি কেবল নজরুলের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলিই ছিল না, বরং বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশের ইতিহাস বিকৃতি, ফ্যাসিবাদী শক্তির উত্থান এবং মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়ার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে এক জোরালো সতর্কবার্তা হিসেবে প্রতিধ্বনিত হয়।
ফ্যাসিবাদী শক্তি ও ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে তীক্ষ্ণ আক্রমণ
মোহম্মদ সেলিম তাঁর ভাষণে বর্তমান শাসকদলের বিরুদ্ধে ইতিহাস বিকৃত করার অভিযোগ এনে বলেন, যারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোনো ভূমিকা রাখেনি, তারাই এখন ইতিহাসকে নতুন করে লিখতে চাইছে। তিনি বলেন, “সাভারকারকে যদি বিপ্লবী সাজাতে হয়, তাহলে গান্ধীবাদ, মার্কসবাদ, সুভাষ এবং ভগত সিং-এর ইতিহাসকে ধ্বংস করতে হবে।” তিনি আরও বলেন যে, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তক থেকে শুরু করে গবেষণা কেন্দ্র পর্যন্ত সর্বত্র ইতিহাস বিকৃত করার এই কাজ চলছে, যা সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করা অসম্ভব করে তুলেছে।
বিভাজনের রাজনীতি ও অধিকার হরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
সেলিম তাঁর বক্তব্যে 'নীল-সাদা' এবং 'গেরুয়াকরণ'-এর মতো রঙের রাজনৈতিক ব্যবহারের সমালোচনা করেন, যা মানুষের মন ও চিন্তাকে প্রভাবিত করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। তিনি বলেন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ যেমন 'ভাগ করো এবং রাজত্ব করো' নীতি অনুসরণ করত, বর্তমান শাসকগোষ্ঠীও একই বিভাজনের রাজনীতি দিয়ে মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করছে।
তিনি গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, ভোটদান থেকে শুরু করে মিটিং, মিছিল, এমনকি ফেসবুক পোস্ট করার অধিকার পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। সেলিম হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “নদীর ধারা যেমন বন্ধ করা যায় না, মানুষের সংগ্রামের ধারাও রোধ করা সম্ভব নয়।” তাঁর মতে, যত বেশি মানুষের কণ্ঠ রোধ করার চেষ্টা করা হবে, তত বেশি শক্তিশালী হয়ে সেই প্রতিরোধ ফিরে আসবে।
ঐক্য ও সংহতির আহ্বান
মোহম্মদ সেলিম তাঁর বক্তব্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক (Inclusive) বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে বাদ দেওয়ার (Exclusive) দক্ষিণপন্থী রাজনীতির পার্থক্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমরা যখন বলি দুনিয়ার মজদুর এক হও, তখন আমরা বলি না এই ভাষার মজদুর আর ওই ভাষার মজদুর।” তাঁর মতে, প্রগতিশীল রাজনীতি অতীতমুখী নয়, বরং ভবিষ্যৎমুখী, যা সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে নতুন সমাজ গড়ার কথা বলে।
তিনি যুবসমাজকে নজরুলের মতো ইতিহাস থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে বর্তমানের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান। এই বক্তৃতার মধ্য দিয়ে তিনি কেবল নজরুলের রাজনৈতিক চেতনার প্রতি সম্মানই জানাননি, বরং দেশের সামনে উপস্থিত সংকটগুলো নিয়েও গভীর আলোচনা করেন।