কোনা গ্রামের এক সাধারণ পরিবারে ১৭৯৩ সালে জন্ম নেওয়া রানি রাসমণি, স্বামী রাজচন্দ্র দাসের মৃত্যুর পর জানবাজারের বিশাল জমিদারির দায়িত্বভার নেন। তার অসাধারণ জীবন ও ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কাহিনি আজও কিংবদন্তি হয়ে আছে।
নদীর জল ব্যবহার করা নিয়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি স্থানীয় জেলেদের উপর মাত্রাতিরিক্ত কর চাপিয়েছিল। এই কঠোর নিয়মের ফলে জেলেদের জীবন-জীবিকা চরম সংকটের মুখে পড়ে। তাদের এই দুর্দশা দেখে রানি রাসমণি এগিয়ে আসেন। তিনি কোনো সাধারণ প্রতিবাদ না করে এক অসাধারণ কৌশল অবলম্বন করেন।
দশ হাজার টাকা খরচ করে রানি রাসমণি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে গঙ্গার দশ কিলোমিটার অংশ ইজারা বা লিজ নেন। এই এলাকাটি ছিল খিদিরপুর থেকে মেটিয়াবুরুজ পর্যন্ত বিস্তৃত। এরপর তিনি তার ইজারা নেওয়া এলাকায় বিশাল লোহার শেকল দিয়ে নদীর জলপথ আটকে দেন। এর ফলে ব্রিটিশদের বাণিজ্যিক স্টিমারসহ সব ধরনের নৌ চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
ব্রিটিশ কর্মকর্তারা এর কারণ জানতে চাইলে রানি ব্রিটিশ আইন অনুযায়ী তার ইজারার বৈধতার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, তার ইজারা নেওয়া এলাকায় এই কাজটি করার অধিকার তার আছে এবং প্রয়োজনে তিনি আদালতের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে প্রস্তুত। তার এই কঠোর অবস্থান এবং আইনি লড়াইয়ের হুমকির মুখে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শেষ পর্যন্ত জেলেদের উপর থেকে অতিরিক্ত কর তুলে নিতে বাধ্য হয়। ফলে মৎস্যজীবীরা আবার অবাধে নদীতে মাছ ধরার অধিকার ফিরে পায়।
এছাড়াও, রানি রাসমণি ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক। তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ সংস্কার আন্দোলনকে সমর্থন করেছিলেন। ব্রিটিশরা যখন মন্দিরের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে চেয়েছিল, তখনও তিনি তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। তাকে 'রাণীমা' এবং 'লোকমাতা' হিসেবে স্মরণ করা হয়। তার জীবন থেকে আমরা শিখি যে, একজন সাধারণ নারীও কীভাবে নিজের প্রজ্ঞা, সাহস এবং দৃঢ়তার মাধ্যমে ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারেন।