দ্রোহ, প্রেম ও সাম্যের কবি
"আমি সেই দিন হব শান্ত, যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না"
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৯তম প্রয়াণ দিবসে বিনম্র শ্রদ্ধা।
কেন তিনি 'বিদ্রোহী কবি'?
তাঁর 'বিদ্রোহী' সত্তা কেবল একটি কবিতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি ছিল তাঁর সমগ্র জীবনদর্শন ও কর্মের প্রতিফলন। নিচের বিষয়গুলোতে ক্লিক করে তাঁর বিদ্রোহী চেতনার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানুন।
"বিদ্রোহী" কবিতা
১৯২২ সালে প্রকাশিত এই কবিতাটি বাংলা সাহিত্যে এক প্রলয় সৃষ্টি করে এবং তাঁকে 'বিদ্রোহী কবি'র অমর খ্যাতি এনে দেয়।
ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে
তাঁর 'ভাঙার গান' এবং 'ধূমকেতু' পত্রিকার মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর আপসহীন লেখনী বারবার তাঁকে কারাগারে পাঠিয়েছে।
সামাজিক সাম্য
তাঁর বিদ্রোহ ছিল ধর্মীয় গোঁড়ামি, সাম্প্রদায়িকতা এবং সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে। তিনি নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলেছেন।
অগ্নিগর্ভ প্রতিবাদ
‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি ছিল পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার এক উদাত্ত আহ্বান। 'আমি চির-বিদ্রোহী-বীর, আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির'—এই পঙ্ক্তিগুলো শুধু কবিতা ছিল না, ছিল বাঙালির মুক্তিকামী চেতনার প্রতিফলন। এটি তৎকালীন সমাজ ও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতিবাদ ছিল।
আপসহীন লেখনী
নজরুল তাঁর লেখনীকে ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। তাঁর পত্রিকা 'ধূমকেতু' ব্রিটিশদের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল। বারবার কারাবরণ করেও তিনি সত্য ও ন্যায়ের পথ থেকে বিচ্যুত হননি। জেলের লৌহকপাটও তাঁর কলমকে থামাতে পারেনি।
মানবতার জয়গান
নজরুলের বিদ্রোহ ছিল শোষিত মানুষের পক্ষে। তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। "গাহি সাম্যের গান— মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান"। তিনি নারী-পুরুষের সাম্য, অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং শোষিত মানুষের অধিকারের কথা তাঁর সাহিত্যে বলিষ্ঠভাবে তুলে ধরেছেন, যা তাঁকে কালোত্তীর্ণ করেছে।
শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার নিবেদন
৪৯তম প্রয়াণ দিবসে সমগ্র জাতি কবিকে স্মরণ করছে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সারা দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচির মাধ্যমে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সকালে কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে ওঠে নজরুলের গান, কবিতা আবৃত্তি ও আলোচনা সভায়।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান
বাংলা একাডেমি, নজরুল ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ শিল্পাকলা একাডেমি কবির জীবন ও কর্মের উপর আলোচনা সভা, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অফুরন্ত অনুপ্রেরণার উৎস
৪৯ বছর পরও নজরুল আমাদের মাঝে স্বমহিমায় ভাস্বর। তাঁর সাহিত্য ও দর্শন আজও আমাদের পথ দেখায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে যেকোনো গণআন্দোলনে নজরুলের গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। তাঁর প্রয়াণ দিবস তাই শুধু শোকের দিন নয়, বরং তাঁর বিপ্লবী চেতনাকে পুনরুজ্জীবিত করার এবং তাঁর সাম্যবাদী আদর্শকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার এক অঙ্গীকারের দিন।