" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory ব্রিটিশ বর্ণবৈষম্যের শিকার: কোমাগাতা মারু ঘটনার মর্মান্তিক অধ্যায় The Komagata Maru Incident: A Tale of Colonial Injustice //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

ব্রিটিশ বর্ণবৈষম্যের শিকার: কোমাগাতা মারু ঘটনার মর্মান্তিক অধ্যায় The Komagata Maru Incident: A Tale of Colonial Injustice

 



কলকাতা, ২রা আগস্ট, ২০২৫: ১৯১৪ সালের সেই বিভীষিকাময় দিনগুলো আজও ইতিহাসের পাতায় এক গভীর ক্ষত হয়ে রয়ে গেছে। কোমাগাতা মারু, নিছকই একটি জাহাজের নাম নয়, এটি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের নির্মমতা আর বর্ণবাদের এক জ্বলন্ত প্রতীক। এই ঘটনায় ভারতীয় অভিবাসীদের প্রতি কানাডার নির্দয় আচরণ এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ঔপনিবেশিক অবিচার ভারত ও কানাডা উভয় স্থানেই তীব্র ক্ষোভের আগুন জ্বালিয়েছিল।


বাবা গুরদিৎ সিং-এর ভাড়া করা জাপানি বাষ্পচালিত জাহাজ কোমাগাতা মারু, ৩২৬ জন স্বপ্নালু ভারতীয়কে নিয়ে সুদূর কানাডার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল। তাদের চোখে ছিল উন্নত জীবনের স্বপ্ন, নতুন করে বাঁচার আশা। শিখ, মুসলমান, হিন্দু—সকল ধর্মের মানুষ একাত্ম হয়ে নতুন ভোরের সন্ধানে পাড়ি জমিয়েছিলেন ভ্যাঙ্কুভারের পথে।


কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল কানাডার মাটিতে পা রাখার আগেই। কানাডার বৈষম্যমূলক "ধারাবাহিক যাত্রা" নীতি, যা মূলত ভারতীয়দের প্রবেশ আটকাতেই তৈরি হয়েছিল, তাদের সকল আশাকে গলা টিপে হত্যা করে। মাত্র ২৪ জন ভাগ্যবান যাত্রী নামার অনুমতি পেয়েছিলেন, বাকি ৩১২ জনকে নির্মমভাবে প্রবেশাধিকার denied করা হয়। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে জাহাজটি ভ্যাঙ্কুভারের উপকূলে আটকে ছিল, যেন এক ভাসমান কারাগার। অথরিটির নির্দয় অবহেলায় জাহাজের ভিতরে যাত্রীরা অনাহারে, অনিদ্রায় ধুঁকছিলেন। অবশেষে, কোমাগাতা মারুকে নৌবাহিনীর প্রহরায় কানাডার জলসীমা ত্যাগ করতে এবং ভারতে ফিরে আসতে বাধ্য করা হয়, বুকভরা স্বপ্ন আর চোখে জল নিয়ে।


যখন জাহাজটি কলকাতার কাছে বাজে বাজে ঘাটে পৌঁছায়, তখন ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ এই হতভাগ্য যাত্রীদের দিকে সন্দেহের চোখে তাকায়। তাদের মনে হয়েছিল, এরা বুঝি রাজনৈতিক আন্দোলনকারী! দলের নেতাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টার সময় পুলিশ ও নিরীহ যাত্রীদের মধ্যে যে সংঘর্ষ বেধেছিল, তা আজও বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে দেয়। ১৮ থেকে ২২ জন নিহত হয়েছিলেন সেদিন, কত পরিবার যে তাদের আপনজনকে হারিয়েছিল তার হিসেব নেই। বেঁচে যাওয়া অনেকেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারারুদ্ধ অথবা তাদের নিজ গ্রামে বন্দী জীবন কাটাতে বাধ্য হয়েছিলেন।


এই মর্মান্তিক ঘটনা শুধু একটি জাহাজ যাত্রার শেষ নয়, এটি হয়ে ওঠে ঔপনিবেশিক বর্ণবাদী অবিচারের এক চিরন্তন প্রতীক। গদর পার্টির মতো বিপ্লবী সংগঠনগুলো এই ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। কোমাগাতা মারুর এই করুণ কাহিনী ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে, যা ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এক নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে। এই ঘটনা প্রমাণ করে দিল, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে ভারতবাসীরা কতটা অবহেলিত আর অসম্মানিত ছিল, এমনকি নিজেদের সাম্রাজ্যের মধ্যেও তাদের কোনো অধিকার ছিল না। কোমাগাতা মারু, তাই কেবল একটি জাহাজ নয়, এটি ঔপনিবেশিক শোষণ আর বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক অবিস্মরণীয় স্মারক, যা আজও আমাদের মনে করিয়ে দেয় সেই সকল সাহসী আত্মাদের কথা, যারা স্বপ্ন দেখতে গিয়ে নির্মমতার শিকার হয়েছিলেন।

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies