জাপানে চালের মূল্যবৃদ্ধি এখন দেশটির রাজনীতি ও অর্থনীতিতে এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। চালের তীব্র ঘাটতি এবং লাগামহীন দাম নিয়ে সরকারের পদক্ষেপ এবং দীর্ঘমেয়াদী কৃষি নীতি নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। ভোক্তারা প্রশ্ন তুলছেন, এই জাপানের চাল সংকট থেকে মুক্তি মিলবে কবে?
সংকটের সূত্রপাত এবং সরকারের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া
সাম্প্রতিক সময়ে জাপানে ৫ কিলোগ্রাম চালের দাম প্রায় ৩,৪৬৭ ইয়েন (প্রায় ২৩ মার্কিন ডলার)-এ পৌঁছেছে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলেছে। মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার শুরুতে জরুরি মজুত থেকে চাল বাজারে ছাড়ার চেষ্টা করলেও, এর কার্যকারিতা এখন হ্রাস পাচ্ছে। এতে জাপানের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে এবং ভোক্তাদের মধ্যে অসন্তোষ চরমে।
দীর্ঘদিনের নীতির পুনর্মূল্যায়ন: এক চাপানো সিদ্ধান্ত?
প্রায় পাঁচ দশক ধরে জাপান চালের অতিরিক্ত উৎপাদন কমাতে এবং কৃষকদের বিকল্প ফসল উৎপাদনে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করেছিল। এমনকি ২০১৮ সালে এই নীতি আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হওয়ার পরেও, পশুখাদ্যের জন্য চাল উৎপাদনে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু এখন উল্টো চালের উৎপাদন বাড়ানোর দিকে জোর দিচ্ছে সরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আকস্মিক নীতি পরিবর্তন রাতারাতি সম্ভব নয়। অর্ধ শতাব্দীর পুরনো একটি ব্যবস্থা পাল্টাতে অনেক সময় লাগবে এবং এটি নানা চাপ ও প্রতিরোধের মুখে পড়ছে। এই জাপানের কৃষি নীতি পরিবর্তন দেশের খাদ্য উৎপাদনের ইতিহাসে এক বড় বাঁক।
বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ ও সমাধান প্রস্তাব
ইয়ামাশিতা কাজুতো-এর মতো কৃষি বিশেষজ্ঞরা এই নীতি পরিবর্তনের পথে বেশ কিছু বাধার কথা তুলে ধরছেন:
স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর চাপ: ইয়ামাশিতা কাজুতো উল্লেখ করেন, উচ্চ মূল্যে আগ্রহী শক্তিশালী গোষ্ঠীগুলো দাম কমানোর মতো পরিবর্তনের বিরোধিতা করতে পারে। এটি সরকারের জন্য একটি বড় চাপ সৃষ্টি করছে।
বয়স্ক কৃষক: জাপানে কৃষকদের একটি বড় অংশ ৭০ বছরের বেশি বয়সী, যা উৎপাদন বৃদ্ধির পথে একটি বড় বাধা। জাপানের গ্রামীণ অর্থনীতিতে বয়স্ক কৃষকদের ভূমিকা এবং নতুন করে উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ কতটা সফল হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
অদক্ষ খামার: ৫০ শতাংশেরও বেশি ছোট এবং অদক্ষ খামার রয়েছে, যাদের উৎপাদন ক্ষমতা কম। এই অদক্ষতা সামগ্রিক উৎপাদনে প্রভাব ফেলছে।
ইয়ামাশিতা কাজুতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দিয়েছেন: যদি পুরনো জমির পরিমাণ কমানোর নীতি তুলে নেওয়া হয় এবং চালের দাম কিছুটা কমতে দেওয়া হয়, তাহলে ছোট ও অদক্ষ খামারগুলো তাদের জমি বড় ও বেশি উৎপাদনশীল খামারগুলোর কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হবে। এতে উৎপাদন খরচ কমবে এবং জাপানি কৃষকরা বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হবে। এটি জাপানের কৃষিক্ষেত্রে সংস্কারের একটি বড় সুযোগ।
ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা ও সরকারের জবাবদিহিতা
সরকার দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের দিকে ঝুঁকলেও, ভোক্তাদের জন্য তাৎক্ষণিক স্বস্তি পাওয়ার সম্ভাবনা কম। কৃষি সমবায়গুলি ইতিমধ্যেই কৃষকদের উচ্চ মূল্য অফার করেছে, যা ভোক্তাদের জন্য দাম কমানো কঠিন করে তুলেছে। ফলে, সরকারের নীতিগত পরিবর্তনগুলো আগামী বছরগুলিতে ফল দেবে বলে আশা করা হলেও, স্বল্পমেয়াদে উচ্চ চালের দামের বোঝা বহন করতে হবে সাধারণ মানুষকে। এই পরিস্থিতি জাপানের অর্থনীতিতে এবং সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে যে তারা কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করবে এবং ভোক্তাদের কাছে কখন স্বস্তি আসবে।